নৌযান ধর্মঘটে অচল অবস্থা চট্টগ্রাম বন্দরে

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:২৯

সাহস ডেস্ক

বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নদী পথে পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করেছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন ৮টি সংগঠনের ডাকা এই ধর্মঘট সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) চট্টগ্রাম জেলা নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মো. নবী আলম জানান, গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদপ্তরের সামনে নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।

ধর্মঘটের সমর্থনে মধ্যরাত থেকেই কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন ৮টি সংগঠনের শ্রমিক নেতা-কর্মীরা। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের পার্শ্ববর্তী ১৬টি ঘাটে শত শত লাইটারেজ জাহাজ ও অয়েল ট্যাংকার অলস বসে আছে।

মঙ্গলবার সকাল ৭টার পর থেকে কোনো লাইটারেজ জাহাজই বহির্নোঙরে যায়নি। এমনকি আগে থেকে পণ্য খালাসে থাকা জাহাজগুলোও খালাস শেষ না করে ঘাটে ফিরে এসেছে।

নৌশ্রমিক নেতা নবী আলম বলেন, আমরা যে দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছি সেগুলো পূর্বনির্ধারিত। করোনার কারণে এতদিন চুপ ছিলাম। শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন তো সবকিছু স্বাভাবিক। তাই আমরা আমাদের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছি।

তিনি বলেন, গত নভেম্বরেও আমরা আন্দোলন শুরু করার পর সরকার ও মালিকদের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হলো দাবি মানা হবে। কিন্তু তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, তাই ধর্মঘটে বাধ্য হয়েছি। এবার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার করব না।

যেসব নৌযান বিকালে বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দিয়েছে, সেগুলো গন্তব্যে পৌঁছানোর পর নোঙর করা থাকবে বলেও জানান চট্টগ্রাম জেলা নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি।

শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি হলো-

১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা

২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান

৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান

৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ

৫. অ্যনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ

৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ

৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান

৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন

৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা

১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং

১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। এগুলোর কয়েকটি দাবি পূরণ হলেও অমীমাংসিত ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০১৮ সালে শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করেন ফেডারেশন নেতারা। যার অনুলিপি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে দেয়া হয়েছে।

এরপর একই বিষয়ে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তর থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের।

আন্দোলনকারীরা জানান, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ১১ দফা উপস্থাপন করা হলেও তাদের মূল দাবি ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত