এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:০২

সাহস ডেস্ক

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে নেমেছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায় ধর্ষকের স্থান নেই,’ ‘ঘাতক-ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেন।

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে ছাত্রলীগের দুই শতাধিক নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কলেজ ও ছাত্রাবাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার পরেও ছাত্রাবাস কেন খোলা রাখা হয়েছিল সেটি বড় প্রশ্ন। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত থাকার পরও ছাত্রাবাস বন্ধ না করায় ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপিঠে কলংকের দাগ লেগেছে।

এসময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুশিয়ারি দেন।

এদিকে গণধর্ষণের এ ঘটনার পর সকল শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন জানান, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আজ জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুরের কক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে এ মামলা দায়ের করে।

গণধর্ষণের এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। শনিবার ভোরে শাহপরান থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকালে ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীকে নিয়ে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। ঘোরার এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে স্ত্রী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের ৮/৯ জন নেতাকর্মী স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি প্রাইভেট কারও ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে প্রাইভেট কারটি তাদের জিম্মায় নেয় এবং স্ত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) প্রেরণ করে।

প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ৬ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ, তারা হলেন- এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও কলেজটিতে ইংরেজিতে মাস্টার্সে অধ্যয়রত শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, একই শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মাছুম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এম সাইফুর রহমান, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা অর্জুন এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ও তারেক।

এদের মধ্যে সাইফুর রহমানের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি দিরাইয়ে, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জে, রনি হবিগঞ্জের এবং তারেক জগন্নাথপুরের বাসিন্দা। তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন শাহপরান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) লিপটন পুরকায়স্থ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা রাতে এমসি কলেজের হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে সাইফুর রহমানের রুম থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও একটি চাকুসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করি। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা প্রক্রিয়াধীন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জোর্তিময় সরকার বলেন, অভিযোগকারী নারীর স্বামীর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার বিকালে তিনি স্ত্রীসহ টিলাগড় এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। এসময় ৪/৫ জন তরুণ তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে ছাত্রাবাসের ভেতরে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

এমসি কলেজের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন জানান, কয়েকজন ছাত্রাবাসে এক দম্পতিকে আটক রাখে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পরে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদও একই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, তাদের কেনো আটকে রাখা হয়েছিলো এবং তাদের সাথে কী আচরণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত