এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ, ছাত্রলীগের ৬ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০৮

সাহস ডেস্ক

সিলেট সরকারি এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই তরুণীর স্বামী শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ৬ জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিলাগড় এলাকার ছাত্রবাস থেকে ওই দম্পত্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ।

মধ্যরাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের খুঁজতে নেমেছে পুলিশ।

প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ৬ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ, তারা হলেন- এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও কলেজটিতে ইংরেজিতে মাস্টার্সে অধ্যয়রত শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, একই শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মাছুম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এম সাইফুর রহমান, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা অর্জুন এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ও তারেক।

এদের মধ্যে সাইফুর রহমানের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি দিরাইয়ে, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জে, রনি হবিগঞ্জের এবং তারেক জগন্নাথপুরের বাসিন্দা। তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন শাহপরান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) লিপটন পুরকায়স্থ। তবে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে কমিটি না থাকায় তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। কিন্ত কলেজের রাজনীতিতে এসব নেতারা সক্রিয় ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকালে ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীকে নিয়ে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। ঘোরার এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে স্ত্রী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের ৮/৯ জন নেতাকর্মী স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি প্রাইভেট কারও ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে প্রাইভেট কারটি তাদের জিম্মায় নেয় এবং স্ত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) প্রেরণ করে।

এদিকে, অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নেমে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা রাতে এমসি কলেজের হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে সাইফুর রহমানের রুম থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও একটি চাকুসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করি। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা প্রক্রিয়াধীন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জোর্তিময় সরকার বলেন, অভিযোগকারী নারীর স্বামীর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার বিকালে তিনি স্ত্রীসহ টিলাগড় এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। এসময় ৪/৫ জন তরুণ তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে ছাত্রাবাসের ভেতরে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

এমসি কলেজের হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন জানান, কয়েকজন ছাত্রাবাসে এক দম্পতিকে আটক রাখে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পরে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদও একই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, তাদের কেনো আটকে রাখা হয়েছিলো এবং তাদের সাথে কী আচরণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

এমসি কলেজের একজন শিক্ষক ও ছাত্রাবাসের পাশের আবাসিক এলাকার দুজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বামীর চিৎকার শুনে বালুচর এলাকা থেকে কিছু লোক এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের দিকে নজর রাখছিলেন। একপর্যায়ে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে ছাত্রাবাস পার্শ্ববর্তী স্টাফ কোয়ার্টার থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে দেখতে পান। ছাত্রাবাস ফটকের সামনে তখন তাদের গাড়িটি ছিল। এক পাশে একটি মোটরসাইকেল রাখা দেখে স্থানীয় লোকজন শাহপরান থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্বামী-স্ত্রী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন।

তরুণীর স্বামী পুলিশকে বলেছেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা সংখ্যায় পাঁচ থেকে ছয়জন ছিলেন। এর মধ্যে দুজনকে তিনি এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে আগে দেখেছেন। এই দুজন তাকে নিজের গাড়িতে আটকে রেখেছিলেন। তিন থেকে চারজন তাঁর সামনে স্ত্রীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকে নিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর ওই তিন যুবক দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় তাঁকে জিম্মি করে রাখা দুই যুবকও পালিয়ে যান।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, রাতে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ছাত্রাবাসে প্রবেশের অনুমতি চায়। আমি তখন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কসহ স্টাফ কোয়াটারে বসবাসরত দুজন শিক্ষককে সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে ছাত্রাবাস এলাকায় প্রবেশ করার অনুমতি দিই। কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ খবর পেয়ে আমি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৯) একটি দলকেও খবর দিই। পুলিশের সঙ্গে র‌্যাবের একটি দল তদন্ত করছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত