করোনায় যাতে দুর্ভিক্ষের প্রভাব না পড়ে, সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:২৭

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে যেন দুর্ভিক্ষের প্রভাব না পড়ে, সে জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। আমি ভেবেছি, করোনা ভাইরাসের কারণে হয়তো বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক ছিলাম বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই সেই দুর্ভিক্ষের প্রভাব না পড়ে।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির নতুন ভবন উদ্বোধন, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে বাংলায় বক্তব্য প্রদান এবং দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেওয়া এবং খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া, সেই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি মানুষকে, যারা গৃহহীন, তাদের গৃহ নির্মাণ করে দেব। যারা ভূমিহীন, তাদের ভূমির ব্যবস্থা করে দেব। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। পুষ্টির নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। পাশাপাশি বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। সব মানুষ যাতে এই প্রণোদনার সহযোগিতাটা পায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি। আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি খাদ্যের ওপর। মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। ৪০ শতাংশ দারিদ্র্য ছিল। সেই হার আমরা ২০ শতাংশে এনেছি। আমরা আরও কমাতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বে করোনা ভাইরাস নামে এখন যে মহাদুর্যোগ চলছে, তা থেকে বিশ্ববাসী শিগগিরই মুক্তি পাক এটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। মানুষ আবার সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারুক এটাই আমরা চাই। এই সময় আমাদের সাধারণত জাতিসংঘে থাকার কথা। কিন্তু যেতে পারিনি করোনা ভাইরাসের কারণে। প্রতিবার আমি জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি। এবার আমার ১৭তম ভাষণ আমি দিতে পারছি না, এটা দুঃখজনক। আসলে জাতিসংঘে সব দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়। পরস্পরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়। একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, একে অপরকে জানতে পারি। এখন বিশ্বে কূটনীতি পরিবর্তন হয়েছে। আগে ছিল রাজনৈতিক কূটনীতি। এখন হয়েছে অর্থনৈতিক কূটনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, পরস্পরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, এসব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বে পরিবর্তন এসেছে। সেটা হলো, এখন রাজনৈতিক কূটনীতি না, অর্থনৈতিক কূটনীতি চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করে, সবার সঙ্গে মিলে কীভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়, একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি কীভাবে আনা যায়, সেভাবে এখন আমাদের কূটনীতি চালাতে হবে। আর এই দায়িত্ব পালনের জন্য দরকার সঠিক প্রশিক্ষণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ৪৬ বছর আগে জাতির পিতা যা বলে গিয়েছিলেন এখনও সেগুলো বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য এবং সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ন্যায়বিচার, দরিদ্রতা থেকে মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন। আমরা তাঁর দেখানো পররাষ্ট্রনীতি—সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এটা অনুসরণ করে চলেছি।

সরকার বর্তমানে অর্থনৈতিক ও পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি অনুসরণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ, বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রযুক্তি আহরণ, বিদেশে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিদেশে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ  সেবা প্রদান- এ পাঁচটি বিষয় কূটনীতিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত