জাহাঙ্গীর-আসাদুলের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:২৯

সাহস ডেস্ক

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে হাতুড়ি পেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখমের ঘটনায় আটক জাহাঙ্গীর হোসেন ও আসাদুল হক এর আগে পৌরমেয়র আব্দুস সাত্তার মিলনের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নামে হামলা, চাঁদাবাজি, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের ছাড়াও অতীতে যুবলীগে তাদের নামে একাধিক অভিযোগও করা হয়েছে।

হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, আসাদুল ইসলাম ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে। অপরদিকে জাহাঙ্গীর আলম ঘোড়াঘাট উপজেলা রানিগঞ্জের আবুল কালামের ছেলে।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং আসাদুল ইসলাম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালে কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে জাহাঙ্গীর আলম আহ্বায়ক হন।

হাকিমপুর থানা পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র‌্যাব রংপুরের একটি দল যৌথভাবে শুক্রবার ভোররাত ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে হিলির কালিগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদুল হককে আটক করে। তাকে রংপুরে র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর ও আসাদুলের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে হামলা, চাঁদাবাজি, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ত্রাণ বিতরণকালে ঘোড়াঘাট পৌর মেয়রের ওপর তারা হামলা চালালে মামলাও দায়ের করা হয়। এছাড়াও যুবলীগে তাদের নামে একাধিক অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা মই দিয়ে উঠে ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ভারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা। মেয়েকে বাঁচাতে এলে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে। উনারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

নিজের কন্যাকে রক্ষা করতে বৃদ্ধ বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ (৭০) এগিয়ে গেলে তাকেও আহত করে সন্ত্রাসীরা। তাকে আহত অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়, পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম।

ওয়াহিদা খানম বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার সফল হলেও ইউএনও ওয়াহিদা আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রাত সোয়া ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে এই অস্ত্রোপচার।

ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, যখন প্রথম তাকে নিয়ে আসা হয় তখন ব্যান্ডেজ করা ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার পর দেখা যায় মাথায় মোট নয়টা আঘাতের চিহ্ন। একটা খুব বড়, যার ভেতর দিয়ে হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। বাকি আটটা ইনজুরি ছিল। তার ভেতরে ছিল মাথার দুই পাশে তিনটা করে ছয়টি, মুখের ওপরে একটি, নাকের ওপরে একটি এবং চোখের নিচে একটি। ভেতরে ঢুকে যাওয়া হাড় বের করা হয়েছে, রক্তরক্ষণ বন্ধ করা হয়েছে। অন্য আঘাতগুলোও সব রিপেয়ার করা হয়েছে। আমার আশাবাদী। তবে এটা হেড ইনজুরি, ব্রেইনের ভেতরে রক্তক্ষরণের ব্যাপার। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিনা এখনই আমরা বলতে পারবো না। তাকে অন্তত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ রাখার পর বলতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত