বিজয় হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মানববন্ধন

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২০, ২১:২৯

বিজয় হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সকল স্তরের নেতা কর্মীর উদ্যোগে কামারখন্দ উপজেলার নান্দিনামধু আমতলা মোড়ে ২৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেল ০৩টায় মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। জামতৈল ষ্টেশন চত্বরে এই কর্মসুচির পালনের স্থান নির্ধারণ করা হলেও পুলিশী বাধার কারণে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বলে মানববন্ধন কর্মসুচি থেকে বক্তারা অভিযোগ করেছেন।

অপরদিকে কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান-আইনশৃ্খংলা পরিস্থিতি জনিত কারণে উপজেলার মোড়ে মোড়ে পুলিশী পাহারা জোরদার এবং কর্মসুচি পালনের স্থান সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার প্রধান আসামী ও মদদদাতাদের গ্রেপ্তারে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগ। ৭৫ পরবর্তী ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্যোগে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে আয়োজিত মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।

২৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলে কড্ডা-জামতৈল আঞ্চলিক সড়কের কামারখন্দ উপজেলার নান্দিনা মধু আমতলা এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিরাজগঞ্জ সদর, শাহজাদপুর, কামারখন্দ, বেলকুচি, উল্লাপাড়া ও কাজিপুর উপজেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মতিন চৌধুরী আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে মেধাবী ছাত্রনেতা বিজয়কে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আজও এ মামলার প্রধান আসামী ও মদদদাতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবী করছি। অন্যত্থায় বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবী মানতে প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিহত বিজয়ের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একটি অংশ নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিল। আমার ছেলে তাদের কথা না শুনে নৌকার পক্ষে কাজ করার কারণেই ওই মহলটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তারাই পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারিদের শাস্তি চাই এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

৭৫ পরবর্তী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ক শামসুজ্জামান আলো বলেন, কামারখন্দ উপজেলার কেন্দ্রস্থল জামতৈল স্টেশনে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশী বাঁধার কারণে তিনটি স্থান পরিবর্তন করে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে নান্দিনা মধু আমতলা এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছি। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়ায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শিফা নূসরাতের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে শিফা নূসরাত বলেন, কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই যাতে সুষ্ঠুভাবে কর্মসূচি পালন করে আমরা সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার বলেন, এ হত্যা মামলার ০৫ আসামীর মধ্যে ইতিমধ্যে ০৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। কর্মসূচিতে বাঁধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। কোন বাঁধা দেয়া হয়নি।

কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহম্মেদ, প্রচার সম্পাদক শামছুজ্জামান আলো, আ.লীগ নেতা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী পিয়ার, এ্যাডঃ আব্দুর রউফ পান্না, কাজিপুর পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দানিউল হক মোল্লা, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, সাবেক সাধারন সম্পাদক এ্যাড. আব্দুল হাকিম, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ইমেলদা হোসেন দীপাসহ ৭৫ পরবর্তী ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মানববন্ধন কর্মসুচি থেকে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকর, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত গ্রেনেড হামলায় জড়িত সকল আসামীর বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর ও জামাত শিবির, বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে কামারখন্দের সন্তান সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক সরকারি হাজী কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেধাবী ছাত্রনেতা এনামুল হক বিজয়ের খুনীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন পর ০৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ছাত্রলীগের ০৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ অবস্থায় নিহত ছাত্রনেতা বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ৭জুন ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পাল্লাপাল্টি আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়াও হত্যা মামলার বাদী নিহত বিজয়ের ভাই রুবেলকে অপহরন এবং অপহরণ মামলার আসামীদের ছাড়িয়ে নিতে থানায় হামলার অভিযোগে আরও ২টি মামলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত