মজার টিফিন

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২০, ১৬:২৬ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০, ১৭:০০

‘আজ আপনি আমাদের মেহমান’-বলে একদল তরুণ খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে আমাদের এই নগরীর অনাহারী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যে। ‘মজার টিফিন’ নামের এই কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন ‘বিকজ উই কেয়ার’-এর মাধ্যমে। যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অন্তত একবেলার খাবার এই অনাহারী, পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌছে দেবার।

‘মজার টিফিন’ কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত স্বেচ্ছাসেবীদের একজন সেবা খান। সিনিয়র এক্সজিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত আছেন দেশের খ্যাতনামা এক বেসরকারি হাসপাতালে। তিনি জানান- ‘আত্মার শান্তির জন্য এখানে কাজ করি। এদের কাছে ধর্ম-বয়স-জাত এসব নিয়ে কোন ভেদাভেদ নাই, কোন টাকা পয়সা নিবে না , এসে কিছু দিলে দাও না হলে আমাদের সাথে মিলে কাজ করো - ব্যস এতেই খুশি আর এভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। যে যা কিছু পাচ্ছে নিয়ে আসছে এখানে, আর সবাই হইহই করে বের হয়ে যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য কাজ করতে। এইটা আমার জন্যে এমন একটা স্থান যেখানে এসে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি, এই মানুষগুলোর মধ্যে থাকলে নিজ জীবনের যন্ত্রণাগুলোকেও ভুলে যাই’

কার্যক্রমটি পরিচালনার দ্বায়িত্বে আছেন বিকজ উই কেয়ার’র প্রধান নির্বাহী অতনু বনিক। যিনি দাদাভাই হিসেবে শিশুদের কাছে পরিচিত। অতনু বনিক জানান, শুরু থেকেই বিকজ উই কেয়ার একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করে থাকি। বিশেষ করে শিশুদের সাথে আমাদের স্কুল ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম সব থেকে বেশি কিন্তু কোভিড-১৯ এর এই অবস্থায় আমাদের কিছু কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সকলদিক বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেই নিজেরাই এই পরিস্থিতিতে কিছু করবো। আমাদের এই প্রিয়  শহর ঢাকাতে এখনো প্রায় ১ লক্ষ মানুষ না খেয়ে ঘুমাতে যায়, আর কোভিড -১৯ এর কারনে যারা দিন আনে দিন খায় অবস্থায় ছিল তারাও এখন কাজের অভাবে উপার্জন করতে পারছে না। এই সকল সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের পাশে আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুয়ায়ী সাহায্য করার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের সাথে চাইলে যে কেউই অংশগ্রহণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে এখানে এসে রান্না করতে হবে এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে মজার টিফিন পৌঁছে দিতে হবে।

কোন প্রকারের অর্থায়ন ছাড়াই কিভাবে বিকজ উই কেয়ার কাজ করছে এই ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আনিকা সাবা জানান- ‘স্বেচ্ছাসেবক মানেই যিনি স্বেচ্ছায় শ্রম দেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এখানে আমরা সকলেই কর্মজীবী যারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনটা নিজেদের মনের শান্তির জন্য এখানে বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকি। অনুদান হিসেবে আমরা উপহার সামগ্রী গ্রহণ করি। কিন্তু সরাসরি টাকা নেই না।

‘মজার টিফিন’ নামকরণের বিষয় জানতে চাইলে  সাবা জানান, ‘আমরা ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে টিফিন শেয়ার করে খেতাম, আমাদের কাছে আনন্দের একটা বিষয় ছিল সকলে মিলে টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া, আর কার টিফিন বক্স খুললে কি খাবার বের হবে এইটা নিয়ে একটা এক্সসাইটমেন্ট কাজ করতো। আমাদের ছেলেবেলার এই আনন্দটাই আমরা আবার সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই তাই এই কার্যক্রমের নাম  ‘মজার টিফিন’।

মানবকল্যাণ ও সামাজিক দায়িত্ববদ্ধতা থেকে ‘আমরা আপনার আত্মবিকাশের সারথি’-এই মূলমন্ত্রকে সাথে নিয়ে বিকজ উই কেয়ার ২০১৬ সাল থেকে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে।