সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যাকান্ড

দু'গ্রুপে সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি মোট ৪টি মামলার আসামী ৩৫০জন

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২০, ২১:০৪

ইনসেটে ছাত্রলীগ নেতা বিজয়

সিরাজগঞ্জে নিহত জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় পাল্টাপাল্টি ২টি মামলার পরে আরও ২টি মামলা হয়েছে। মামলায় নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ৩৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো মোট ৪টি। সংঘর্ষের কারনে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে বুধবার থেকে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় বন্ধ এবং আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

সদর থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, শনিবার জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল হকের স্ত্রী মুক্তা মনি বাদী হয়ে তার স্বামীকে মারপিটের অভিযোগে এনে একটি মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৭৫জনের নাম উল্লেখ্য এবং ১০০/১৫০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এর আগে সংঘর্ষে আহত গয়লার আহম্মেদ সেখের পক্ষে সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ খান ৯ জুলাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৮১জনের নাম উল্লেখ্য এবং ৩০/৪০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার পরই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বাদী হয়ে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটিতে নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২৮০জনকে আসামী করা হয়েছে।

ওসি আরও বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বাদী হয়ে দায়ের করা মামলা দুটির তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা এবং মুক্তা খাতুন ও রাশেদ খানের দায়ের করা মামলা দুটির তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নুরুল ইসলাম। এসব মামলায় শনিবার পর্যন্ত ২৫জনকে গ্রেপ্তারের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

জেলা যুব লীগের সদস্য মুক্তা মনি দায়ের করা মামলার শীর্ষ পর্যায়ের আসামীরা হলেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল, সাবেক সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন, সাবেক সাধারন সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম লিমন, সদর উপজেলা মৎস্যজীবিলীগের আহবায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্ডল, সদস্য মুলিবাড়ির হাজী মজনু, সয়দবাদ ইউপি সদস্য মুলিবাড়ির আব্দুল মোমিন, পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহাদত হোসেন, যুবলীগ নেতা কল্যাণীর ফরিদ আহম্মেদ, দত্তবাড়ির মো: হোসেন, আবু মুসা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পীর সুমন, তৈহিদ প্রমুখ।

অপরদিকে, সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ খানের দায়ের করা মামলার শীর্ষ পর্যায়ের আসামীরা হলেন, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন, তার ভাই সদর থানা আওয়ামীলীগের সদস্য বেলাল হোসেন, সংঘর্ষে আহত জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল হক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিম রেজা নুর দিপু, শহর যুবলীগের আহবায়ক এমদাদুল হক এমদাদ, ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি টি এম রিজভী. সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদ জামিউর রহমান উল্লাস ও শহর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ৭জুন নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষে অন্তত: ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। টানা দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয়গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হন। এর আগে ২৬ জুন জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বর্তমানে ৩ জন জেলহাজতে, একজন জামিনে এবং প্রধান আসামী পলাতক রয়েছে। ঘটনার পর ২৮ জুন মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নিহত এনামুল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত