নিহত ছাত্রলীগ নেতার মিলাদে এমপি মুন্না গ্রুপের হামলা, আহত ৩০

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:৪৭

সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত সদ্য নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে অতর্কিত হামলা করে জেলার সদর আসনের এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার গ্রুপ। এতে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগের দু’পক্ষ একে অপরকে দায়ী করছে।

০৭ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ০৭টা পর্যন্ত প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ বড়পুল হতে খেদন সর্দারের মোড় পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে তা পুরো এসএস রোডে ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। রাত ০৮টা পর্যন্তও শহরের দুটি পয়েন্টে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়ায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। সংঘর্ষে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়িয়ে। শহরের দোকানপাট মুহুর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ জানান, জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে শহরের এসএস রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে শান্তিপুর্ণ মিলাদ মাহফিল চলছিল। সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সুর্য্য, এ্যাড বিমল কুমার দাসসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। শান্তিপুর্ণ মিলাদ মাহফিল চলাকালে স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক লোকজন নিয়ে মিছিল সহকারে স্মরণ সভাস্থলে এসে হামলা চালায়। আমরা প্রতিরোধ করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

তিনি জানান, তাদের হামলায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নাঈম, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জুবায়ের, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদসহ অন্তত ২০জন আহত হয়েছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবী করেন তিনি। এ সময় তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীর নয় বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ছিল।

অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি মোবাইলে বলেন, ওই মিছিলে আমি ছিলাম না। তখন আমি বাসায় অবস্থান করছিলাম। তবে আমি শুনেছি যে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা বলেন, প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে দোয়া মাহফিলে যোগ দেয়ার জন্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে গেলে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। আমরা প্রতিহত করতে গেলে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘সদ্য প্রয়াত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের রুহের মাগফেরাত কামনায় মঙ্গলবার বিকেলে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। আসর নামাজ শেষ না হতেই দলীয় কার্যালয়ের পেছনে থাকা কতিপয় উশৃঙ্খল নেতাকর্মীরা গোন্ডগোল শুরু করে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেলে কর্মসূচী তাড়াতাড়ি শেষ করে সিনিয়র নেতারা দলীয় অফিস থেকে চলে আসি।

তিনি আরো বলেন, এনামুল হক বিজয়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আমরাও গভীর শোকে শোকাহত। কিন্তু এ ঘটনায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাতের বিষয়টিও অনাঙ্খিত।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিতি থাকা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য বলেন, এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল চলছিল। সেখানে জেলার সভাপতিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবীব খোকার নেতৃত্বে দু’শত লোকজন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে হামলা চালায়। যে কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার বলেন, জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত স্মরণ সভা চলাকালে একাংশের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার সময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ক্রমশ তা শহরের মেছুয়া বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন টহল জোরদার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বিকেলে আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে ০৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর রবিবার (০৫ জুলাই) সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২৭ জুন (সোমবার) নিহত বিজয়ের বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের ০২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ০৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর গত ২৮ জুন (মঙ্গলবার) মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ০২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নিহত এনামুল হক বিজয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।