সিরাজগঞ্জে আহত ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের মৃত্যু

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২০, ২৩:১৮

সাহস ডেস্ক

সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জেলার সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারের বলি হলেন ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়। ০৯ দিন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন আহত এ ছাত্রলীগ নেতা। ০৫ জুলাই (রবিবার) সকাল ১১টার দিকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়ার পর চিকিৎসকরা এনামুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এনামুলের মৃতদেহ সিরাজগঞ্জে তাঁর গ্রামের বাড়িতে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আ.লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র, সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর দলীয় রাজনীতিতে জেলা আ.লীগ সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা: মো: হাবিবে মিল্লাত মুন্নার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের রাজনীতি। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর থেকেই  রাজনীতির মাঠ দখল রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ডা: মো: হাবিবে মিল্লাত মুন্না। জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের অনুসারীদের মারধর ও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

২৬ জুন (শুক্রবার) বিকেলে প্রয়াত আ.লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে আসার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করা হয়। সে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও জামতৈল সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এবং কামারখন্দ উপজেলার চালা শাহবাজপুর এলাকার বাসিন্দা। আহত হওয়ার পর আশংকাজনক অবস্থায় ২৭ জুন ছাত্রলীগ নেতা এনামুলকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই আইসিইউতে রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। গত কয়েকদিন অধিকাংশ সময় সে অচেতন ছিল।    

এ ঘটনার পর আহত ছাত্রলীগ নেতার বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের ০২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ০৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ০৫ জনের মধ্যে ০৪ জন গ্রেপ্তার হলেও প্রধান আসামী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিয়ারধানগড়ার শিহাব আহমেদ জিহাদ (২৩) এখনও পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান বিজয়, জাহিদুল ইসলাম ও সাগর জেলহাজতে রয়েছেন। জামিনে মুক্ত রয়েছেন আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন। এ ঘটনার পর ২৮ জুন (রবিবার) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ মামলার ০২ আসামী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহরের সয়াগোবিন্দ ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার আল-আমিন ও আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহরের দিয়ারধানগড়া মহল্লার শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো সাহস২৪.কমকে বলেন, এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার আসামীরা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা: মো: হাবিবে মিল্লাত মুন্নার লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করে। এদের ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে বসিয়েছেনও তিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সাহস২৪.কমকে বলেন, বাংলাদেশ আ.লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর সিরাজগঞ্জের দলীয় রাজনীতিতে আরো প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। তাঁরা সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মোহাম্মদ নাসিমের অনুসারীদের মারধর ও হুমকি দিচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা বিজয়কে যেদিন কুপিয়ে আহত করা হয় সেদিন বিজয় মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলো। আজ বিজয়কে চীরতরে বিদায় দিতে হলো। আমরা এই হত্যাকান্ডে জড়িত সকলের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।

এদিকে এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী পিয়ার, যুব বিষয়ক সম্পাদক মো: বদরুল আলম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ইমরুল কায়েস তপন, উপ-প্রচার সম্পাদক নাসিমুর রহমান নাসিম, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম জিহাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক, সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল, সাবেক সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত