সুবর্ণচরে বিয়ের কাবিনামা নিয়ে কাজীর প্রতারণা

বিচারের দাবীতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে নির্যাতিতা নারী

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২০, ১৯:৪৫

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালী সুবর্ণচরে বিয়ের কাবিন নিয়ে প্রতারণা করেছেন এক কাজী।  শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হলেও কাবিনামায় উল্লেখ করা হয় মাত্র ২ লক্ষ টাকা। 

কাজীর এমন প্রতারণা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল,  ঐ কাজীর উপযুক্ত শাস্তির দাবীতে প্রশাসন সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নির্যাতিতা নারী। এলাকাবাসীর জবানবন্দীতে উঠে আসে কথিত যুবলীগে নেতা কাজী  ইব্রাহাম খলিল রাসেলের যত অনিয়মের ভয়ংকর সব তথ্য।  

ঘটনাটি ঘটে সুবর্ণচর উপজেলার ৪ নং চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর ওয়াপদা গ্রামে।

সরজমিন ও থানায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, চর ওয়াপদা গ্রামের মৃত ইউছুপের মেয়ে শারমিন আক্তার(২৩)এর  সাথে একই গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের পুত্র মোঃ সালা উদ্দিন(২৬) এর সাথে সামাজিকভাবে ১৫ অক্টোবর ২০১৯ সালে বিয়ে হয়। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে বিয়ে পড়ান একই এলাকার সমাজের ঈমাম মাওলানা মোঃ জাকের হোসাইন। সে বিয়ের কাজীর দায়ীত্ব পালন করেন চর ওযাপদা গ্রামের ওহাব মাষ্টারের পুত্র মোঃ ইব্রাহিম খলিল রাসেল। সে বিয়েতে কাজী রাসেল সবকিছু একটি সাদা কাগজে লিখে নেন। 

বিয়ের ৫ মাস পর থেকে স্বামী সালাউদ্দিন শারমিন আক্তারকে যৌতুকের জন্য মারধর করে আসছে, সম্প্রতি নির্যাতনের বিষয়ে শারমিনের মা শেফালী বেগম প্রতিবাদ করলে সালাউদ্দিন শারমিনকে তালাক দেয়ার হুমকি দেন।  বিষয়টি এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিনকে জানানো হলে তিনি শারমিনকে তার কাবিননামা দেখাতে বলে। পরে শারমিন চর বৈশাখী থানার হাটে অবস্থিত কাজী অফিসে কাবিননামা আনতে গেলে টালবাহানা করেন কাজী রাসেল। পরে সমাজের লোকজনের চাপসৃষ্টি করলে গত ২৯ জুলাই কাবিননামা দেন ঐ কাজী।  

কাবিননামা হাতে পেয়ে অবাক হলেন নির্যাতিতা নারী শারমিন আক্তার কাবিনামায় ৯ লক্ষ টাকা স্থলে ২ লক্ষ টাকা উল্লেখ করা হয় এর মধ্যে ১ লক্ষ টাকা উসুল দেখানো হয়। প্রতিবাদ করলে শারমিনকে গুম খুনের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেন শারমিনের মা শেফালী বেগম।

এলাকাবাসী বলেন, শারমিনের স্বামী  সালাউদ্দিন বিয়ের আগে শারমিনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে, এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক শালিসি বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে উপরোক্ত তারিখে ৯ লক্ষ টাকায় দেনমোহর ধার্য করে শারমিনকে বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে শারমিনকে নির্যাতন করে আসছে এবং শারমিনকে তালাক দেয়ার হুমকি প্রদর্শন করে, পরে শারমিনের আত্বীয় স্বজন এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ কাবিননামার জন্য কাজীর দ্বারস্থ হন পরে তারা দেখেন ৯ লক্ষ টাকার স্থলে মাত্র ২ লাখ টাকা দেনমোহর লেখা হয়। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হয় এবং এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। 

স্থানীয় ব্যক্তিরা আরো বলেন, ইব্রাহিম খলিল ওরফে কাজী রাসেল স্থানীয় আল আমিন বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি'র দায়িত্বে রয়েছেন। সে ক্লিনিকে সরকারিভাবে ঔষধ দেয়া হলেও তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকারি ঔষধের জন্য জনপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। অনেকবছর ধরে সরকারি ঔষধ মানুষের কাছে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন ইব্রাহিমকে খলিল ওরফে কাজী রাসেল  । এছাড়াও সরকার দলের পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব খাটানোর ফলে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা। 

ঘটনার বিষয়ে  রাসেলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন বলে জানান। 

 ৩০ জুন শারমিনের মা শেফালী বেগম বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

শেফালী বেগম বলেন, কাজি রাসেল আমার মেয়ের স্বামী সালাউদ্দিনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে ৯ লক্ষ টাকার কাবিনের জায়গায় ২ লক্ষ টাকা উল্লেখ করেছে, তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আমি যেন মুখ না খুলি, বাবা হারা এতিম মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাবো? আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই। 

চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম সেখানে ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে শারমিনের বিয়ে হয় কিন্তু এখন কাজী রাসেল কাবিনামায় ২ লক্ষ টাকা উল্লেখ করেন,  যা বড় ধরনের অন্যায় এবং প্রতারণা। আমরা চাই দোষীদের শাস্তি হোক।  চর ওয়াপদা ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ৯ লক্ষ টাকা দেনমোহর হয়েছে এটা সত্য তবে কাজী সাহেব এরকম প্রতারণা করা ঠিক হয়নি। বাপ হারা এতিম মেয়েটির সাথে এমন ঘটনা সত্যই দুঃখজনক।

চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাহেদ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি,  তদন্ত করে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত