উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা সেতুতে ফাটল

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২০, ০৩:২৬

সাহস ডেস্ক

ঢাকার সদরঘাটে ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধারে আসা উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ এ ফাটল তৈরি হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) এর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৯ জুন) সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সেতুর একটি জায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায়, যানবাহন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার আমাদের বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শ্যামপুর থানার ওসি আবু আনসার জানান, রাত ৮টা থেকে সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতুর যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকা-মাওয়া সড়কের এক পাশও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা সেতু-১ বন্ধ হলেও বাবুবাজারের সেতু দিয়ে মাওয়া অভিমুখে চলাচল করা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ফরাশগঞ্জ এলাকায় একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৩২ জন মারা যান। মৃত ৩২ জনের মধ্যে ২১ জন পুরুষ, আটজন নারী এবং তিনজন শিশু। ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে আনুমানিক ৫০-৬০ জন যাত্রী ছিল

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে 'মর্নিং বার্ড' নামে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ছেড়ে আসে। এরপর সদরঘাটে এসে ঘাটে পৌছানোর কয়েক মূহুর্ত আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ নামে একটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় এই দুঘর্টনা ঘটে। 

ঘটনাস্থলের কাছের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, 'মর্নিং বার্ড' নামে আকারে ছোট লঞ্চটিকে পেছন থেকে বড় সাদা একটি লঞ্চ ধাক্কা দিয়ে সামনে ঠেলে নিচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ছোট লঞ্চটি পুরোপুরি উল্টে বড় লঞ্চটির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। বড় লঞ্চটির নাম ময়ূর-২। ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ রুটে চলাচল করে।

মূলত সদরঘাট, সোয়ারীঘাট এবং মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসাবাণিজ্য করেন, এবং মুন্সীগঞ্জ থেকে সকালে ঢাকায় এসে বিকেল-সন্ধ্যায় ফিরে যান এমন মানুষেরা নিয়মিত এই রুটে যাতায়াত করেন।

এদিকে, এ ঘটনায় ভাসমান অবস্থায় এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবুরিরা যখন টিউবের মাধ্যমে লঞ্চটি ওপরে তোলার চেষ্টা করছিলেন এবং লঞ্চটির একাংশ ওপরে উঠে আসছিল ঠিক তখনই ওই ব্যক্তি লঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসেন।

উদ্ধার ব্যক্তির নাম সুমন ব্যাপারী। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর আব্দুল্লাহপুর। তাকে মিডফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ওই ব্যক্তি লঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসার পর ডুবুরিরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে লাইফ জ্যাকেটে ঢেকে এবং শরীর মেসেজ করে তার শরীর গরম করার চেষ্টা করেন। এরপর ওই ব্যক্তি চোখ মেলে তাকান। 

ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন জানান, তারা যখন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিটিকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন তিনি চোখের ইশারায় কথার জবাব দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে দীর্ঘ সময় পানির নিচে আটকে থাকায় তার শরীরের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল। পানির নিচে তলিয়ে গেলেও এ ব্যক্তি কীভাবে বেঁচে গেলেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

ধারণা করা হচ্ছে, তিনি যেখানে আটকা পড়েছিলেন সেখানে হয়তো সেভাবে পানি প্রবেশ করেনি। আজ যখন টিউবের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লঞ্চটি তোলার চেষ্টা করা হচ্ছিল তখন লঞ্চটি সামান্য ভেসে ওঠার পর ওই ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টায় বেরিয়ে আসেন এবং উদ্ধার কর্মীরা তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে নৌকায় তুলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত