পিরোজপুরে ভূয়া ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু, সহোদর আটক

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২০, ১৯:৩২

সাহস ডেস্ক

পিরোজপুরে ভুয়া চিকিৎসায় তুষার শেখ (১০) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসক পরিচয়দানকারী আলী হাসান লিয়ন (৩০) ও তার ছোট ভাই আলী ইমাম অন্তু (২২) নামের দুই ভাইকে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৪ জুন) রাতে। নিহত শিশু তুষার শেখ পৌরসভার ঝাটকাঠী এলাকার মো. সোহাগ শেখের পুত্র।

এ ঘটনায় আটক ভুয়া দুই সহোদর চিকিৎসক আলী হাসান লিয়ন ও তার ছোট ভাই আলী ইমাম অন্তু পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মৃত আব্দুস ছালাম মধুর পুত্র। পৌর কমিশনার মধুর মৃত্যুর পর ওই ওয়ার্ডের কমিশনার হন মধুর স্ত্রী লায়লা পারভীন।

নিহতের চাচা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম মিঠু জানান, তার ভাইরপো তুষার শেখ (১০) গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে পৌর সভার খুমুরিয়া এলাকায় ঘুরতে যায়। এ সময় ইজিবাইক উল্টে তার ডান পা ভেঙ্গে যায়। রাতে তাকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোহাম্মদ কবির হোসেন ওই রোগীর স্বজনদের শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডের টাউন মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখান থেকে উত্তর নামাজপুর এলাকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসার কথা বলে পৌরসভার সাবেক কমিশনার আব্দুস ছালাম মধু’র বাড়িতে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, সেখানে বাড়ির বৈঠক খানায় পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের ফার্মসিষ্ট সচীন্দ্র নাথ, নাইট গার্ড মোহাম্মদ মাজেদ হোসেন ও পৌর কমিশনার লায়লা পারভীনের (মৃত মধু কমিশনারের স্ত্রী) দুই পুত্র আলী হাসান লিয়ন ও তার ছোট ভাই আলী ইমাম অন্তু এ ৪ জনে সেখানে বসে তাকে অপারেশন করেন। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত সোয় ১২টার দিকে তাকে একটি অটো রিক্সায় করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ সময় ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাক্তার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, তাকে সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে আবারও তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা পরীক্ষা করে তাকে মৃত দেখে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করি।

এ ঘটনার পর ওই শিশুকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কবির হোসেন, হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট (ভুয়া ডাক্তার পরিচয়ে অস্ত্রোপচার করা) সচীন্দ্র নাথ, নাইট গার্ড মো. মাজেদ হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

থানা পুলিশের অফিসার ইন চার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদল জানান, ভূয়া চিকিৎসায় ওই শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি (ওসি) সহ থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক হাসপাতালে যাই। রাত ১টার দিকে ওই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ভূয়া ডাক্তার দুই ভাইকে আটক করি। মৃত শিশুকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ জেলা হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকী জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, জেলা হাসপাতালের কিছু কর্মচারীদের সহায়তায় একটি চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে ভূয়া বিভিন্ন ঝটিল রোগের চিকিৎসা সহ অস্ত্র পাচার করে আসছে। আর এমনই একটি হাসপাতাল শহরের ভাইজোড়া এলাকার মধু কমিশনারের বাড়িতে স্থাপিত ওই ক্লিনিকটি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত