লিবিয়ার মিজদাহ শহরে নিহত বাংলাদেশীদের দাফন সম্পন্ন

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২০, ১০:৩৯

সাহস ডেস্ক

ভূমধ্যসাগরীয় দেশ লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্যের সহযোগী ও স্বজনদের বর্বরোচিত আক্রমণে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মরদেহ সেখানকার মিজদাহ শহরেই কবর দেয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ওই ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ জন। হতাহতদের মধ্যে ‘নিখোঁজ বা মৃত’ হিসেবে ২৪ জনের এবং আহত হিসেবে ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

স্থানীয় একাধিক বাংলাদেশি জানান, মরদেহগুলো পঁচে গন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ওই এলাকায় যুদ্ধাবস্থা চলমান থাকায় এবং হামলাকারী লিবিয়ান ওই গোষ্ঠী চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেখানে যেতে পারেননি।

হামলাকারীরা অন্য বাংলাদেশিদেরও খুঁজছে বলে জানান স্থানীয় বাংলাদেশিরা। তবে নিহত বাংলাদেশিদের স্থানীয়ভাবে দাফন করার বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বেনগাজীর বাংলাদেশ কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের অবস্থা ভালো নয়। পরিস্থিতি এত খারাপ যে, এখনও অক্ষত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হওয়া বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। হামলাকারীরা জীবিত বাংলাদেশিদের অবস্থান জেনে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে এবং আশ্রয়দাতাসহ অনেকেই হুমকির মুখে থাকাতে উদ্ধার কাজে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মিজদাহ শহরে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান এবং এ অঞ্চলটি এখন দুটি শক্তিশালী পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। কিছুদিন আগে ত্রিপোলিভিত্তিক এবং ইউএন সমর্থিত জিএনএ সরকার এই অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্বভিত্তিক সরকারি বাহিনী দুদিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে লিবিয়ায় নিখোঁজ ও নিহতদের তালিকা করা হয়েছে। সেই নিহত ও নিখোঁজের তালিকায় মাদারীপুর জেলারই ১৬ জন রয়েছেন। মাদারীপুরের যেসব মানুষের নাম রয়েছে তারা হলেন, রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের রহিম, বিদ্যানন্দী গ্রামের জুয়েল ও মানিক, টেকেরহাট এলাকার আসাদুল, আয়নাল ও মনির, ইশিবপুর ইউনিয়নের সজীব ও শাহিন, সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের শামীম।

শুধু জেলা মাদারীপুর লেখা তালিকায় রয়েছে জুয়েল, সৈয়দুল ও ফিরুজ। তবে এদের মধ্যে কে মারা গেছেন আর কে জীবিত বা নিখোঁজ আছেন তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।

এছাড়া আহতদের তালিকায় রয়েছেন সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ত্রিভাগদি গ্রামের খালেক বেপারির ছেলে ফিরোজ বেপারি, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কদমবাড়ির মোক্তার আলী শিকদারের ছেলে মোহাম্মদ আলী শিকদার ও ইশিবপুর ইউনিয়নের খলিল খালাসীর ছেলে সম্রাট খালাসী।  

রাজৈরের বিদ্যানন্দী গ্রামের জুয়েলের ভাই লিটন বলেন, আমার ভাই লিবিয়ায় গিয়েছিল। বিভিন্নভাবে শুনছি নিহত ও নিখোঁজের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তবে আমরা এখনও জানতে পারিনি সে বেঁচে আছে, নাকি নিখোঁজ আছে।

‘নিখোঁজ বা মৃত’ ২৪ জন হলেন- গোপালগঞ্জের সুজন ও কামরুল; মাদারীপুরের জাকির হোসেন, সৈয়দুল, জুয়েল ও ফিরুজ, রাজৈরের বিদ্যানন্দীর জুয়েল ও মানিক, টেকেরহাটের আসাদুল, আয়নাল মোল্লা (মৃত) ও মনির, ইশবপুরের সজীব ও শাহীন, দুধখালীর শামীম; ঢাকার আরফান (মৃত); টাঙ্গাইলের মহেশপুরের বিনোদপুরের নারায়ণপুরের লাল চান্দ; কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব ও সোহাগ, রসুলপুরের আকাশ ও মো. আলী, হোসেনপুরের রহিম (মৃত) এবং যশোরের রাকিবুল।

আহত ১১ জন হলেন- মাদারীপুর সদরের তীর বাগদি গ্রামের ফিরোজ বেপারী (হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ), ফরিদপুরের ভাঙ্গার দুলকান্দি গ্রামের মো. সাজিদ (পেটে গুলিবিদ্ধ), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শম্ভপুর গ্রামের মো. জানু মিয়া (পেটে গুলিবিদ্ধ), ভৈরবের জগন্নাথপুর গ্রামের মো. সজল মিয়া (দুই হাতে মারাত্মকভাবে জখম ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা বাড়ির ওমর শেখ (হাতে মারাত্মকভাবে জখম ও আঙ্গুলে কামড়ের দাগ, দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ), টাঙ্গাইলের মহেশপুরের বিনোদপুরের নারায়ণপুরের মো. তরিকুল ইসলাম (২২), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বেলগাছির খেজুরতলার মো. বকুল হোসাইন (৩০), মাদারীপুরের রাজৈরের কদমবাড়ির মো. আলী (২২), কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সখিপুরের মওটুলীর সোহাগ আহমেদ (২০), মাদারীপুরের রাজৈরের ইশবপুরের মো. সম্রাট খালাসী (২৯) এবং চুয়াডাঙ্গার বাপ্পী (মস্তিষ্কে গুলিবিদ্ধ, গুরুতর অবস্থা)। এরা সবাই ত্রিপোলি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত