কীভাবে নিরাপদে ঈদ উদযাপন করবেন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ০১:০০

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র রমজানে মাসব্যাপী রোজা পালনের পর মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর অতি সন্নিকটে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মহামারির মধ্যে আসছে মুসলমানদের বৃহত্তম উৎসবটি। হ্যাঁ! আমরা চলমান করোনাভাইরাস মহামারির কথা বলছি। বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং এ রোগে ৪০০ জনেরও বেশি মারা গেছেন। এ বছরের পবিত্র ঈদটি যেন আপনার বা আপনার পরিবারের সর্বশেষ উদযাপন না হয়। এ নিবন্ধে আমরা কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে কীভাবে নিরাপদে ঈদ উদযাপন করা যায় সে সম্পর্কে কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

মুদি দোকানে কেনাকাটা সম্পর্কে সতর্কতা

ঈদের আগে সাধারণত পরিবারের জন্য মুদি দোকানে কেনাকাট করার ঝোঁক থাকে। অনলাইনের মুদি দোকানগুলো থেকে পণ্য অর্ডার করার চেষ্টা করুন। শারীরিকভাবে মুদি দোকানে যাওয়ার জন্য অন্য কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া না গেলে কম ভিড়ের দোকানে যান। মাস্ক এবং হাতের গ্লাভস পরুন। আপনার ব্যাগে পরিষ্কার টিস্যু এবং অ্যালকোহল ভিত্তিক (৬০-৭০ শতাংশ) স্যানিটাইজার বহন করুন। শপিং ব্যাগ বহন করার আগে এটি পরিষ্কার টিস্যু দিয়ে মুছুন।

মুদি দোকানি এবং অন্যান্য ক্রেতাদের কাছ থেকে কমপক্ষে ৬ ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডে অর্থ প্রদানের মতো বিকল্প বেছে নিন। মুদি দোকান ছেড়ে যাওয়ার পরে আপনার হাত স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। বাড়িতে প্রবেশের পর জুতা খুলে রাখুন এবং রান্নাঘরের একটি পূর্বনির্ধারিত কোণায় ব্যাগগুলো রেখে দিন। পরে সাবান এবং পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন। সর্বশেষ আপনার মুদি পণ্য যথাযথ উপায়ে জীবাণুমুক্ত করুন।

শপিংমলে সতর্কতা অবলম্বন করুন

ঈদের সময় কেনাকাটা বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় একটি কাজ। পবিত্র ঈদ উদযাপনকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য উপহার কেনা বাংলাদেশিরা পছন্দ করেন। এবার ঈদ শপিংয়ের জন্য আপনাকে বাড়ির বাইরে যাওয়ার দরকার নেই! আপনি জামাকাপড়, জুতা, প্রসাধনী, গহনা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী অনলাইনে কিনতে পারেন।

তবে, আপনি যদি এখনও শপিংমলগুলোতে যেতে চান তবে মাস্ক এবং গ্লাভস পরার মতো সুরক্ষা নিন। লিফটের বোতামগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করা থেকে সতর্ক থাকুন। আপনি বোতামগুলো টিপ দিতে কনুই ব্যবহার করতে পারেন। সিঁড়ি ব্যবহার করার সময় কোনো রেলিং স্পর্শ না করার চেষ্টা করুন। এ জাতীয় স্থানগুলো সাধারণত অসংখ্য লোক স্পর্শ করে থাকেন। কে জানে হয়ত দর্শনার্থীদের মধ্যে কেউ ভাইরাসটি বহন করতে পারেন।

এগুলো ছাড়াও শপিংমলগুলোতে কাপড় ছোঁয়া বা ট্রায়াল করা এড়ানোর চেষ্টা করুন। শপিংমলে কোনো খাবার গ্রহণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। সম্ভব হলে নিজের পানির বোতল এবং খাবার নিয়ে যান। শপিংমল ছাড়ার পরে আপনার হাত স্যানিটাইজ করতে ভুলবেন না। ঘরে আসার পরে জুত খুলে রাখুন এবং আপনার হাতটি আবার ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে সতর্কতা

নামাজের মাধ্যমে ঈদুল ফিতর উদযাপন শুরু হয়। প্রতি বছর মুসলিমরা ঈদের নামাজে যোগদানের জন্য মসজিদগুলোতে যান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে এ বছর সুরক্ষার স্বার্থে চিকিৎসক ও সরকার লোকজনকে ঈদ কিছুটা ভিন্ন উপায়ে উদযাপন করার কথা জানিয়েছে।

আপনি যদি ঈদের নামাজের জন্য কোনো মসজিদে যেতে আগ্রহী হন তবে নিম্নলিখিত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে ভুলবেন না।

ঈদের নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে অযু করে যাওয়া উচিত। যদিও মসজিদগুলোতে অযু করার জন্য একটি নির্ধারিত জায়গা রয়েছে। কিন্তু অযুর পানির ট্যাপগুলো স্পর্শ করা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনি হয়তো জানেন যে করোনাভাইরাস দীর্ঘ সময়ের জন্য পানির ট্যাপগুলোতে বেঁচে থাকতে পারে।

জায়নামাজ আপনার বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব না হলে আপনার সাথে এক টুকরো পরিষ্কার কাপড় নিন। তারপরে কাপড়টি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে আপনি নামাজের সময় হাত, কপাল এবং মুখের কিছু অংশ রাখবেন। নামাজের সময় কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। নামাজের পরে অন্য মুসলমানদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে কোলাকুলি না করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

একত্রিত হওয়ার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা

পবিত্র ঈদের নামাজের পর রীতি অনুসরণ করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এ বছর আপনি আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানানো হ্রাস করতে পারেন। বাড়িতে থাকাকালীন আপনার আত্মীয়দের শুভেচ্ছা জানাতে ভিডিও কল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। তবে, আপনি যদি এখনও কোনো আত্মীয়ের জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে আপনার মাস্কটি অবশ্যই সাথে রাখবেন।

বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। বিশেষত ঈদ উৎসব চলাকালীন সব অর্থনৈতিক মর্যাদার মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের জন্য সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করতে পছন্দ করে। আপনি বাড়িতে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে যদি আপনি বড় পারিবারিক আয়োজনের পরিবর্তে একবারে ছোট পরিসরে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। আপনার অতিথিদের সামনে মাস্ক পরুন এবং তাদেরও একই কাজ করতে উৎসাহ দিন।

এগুলো ছাড়াও খাবার পরিবেশন করার সময় কিছু সতর্কতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশন করা চামচগুলোর সাধারণ ব্যবহার করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনি আলাদা পরিবেশনকারী চামচ এবং ডিসপোজেবল ক্রোকারি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার অতিথিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিক্ষিপ্তভাবে বসতে বলুন। সামগ্রিকভাবে, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য খাদ্য বিতরণের বিন্যাসটি বুদ্ধির সাথে পরিকল্পনা করুন।

শেষ কথা

পবিত্র ঈদ সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য স্বর্গীয় সুখ নিয়ে আসে। আগের বছরগুলোর মতো নয়, আসুন আমরা এবার ঈদকে সতর্কতার সাথে আলাদা স্বাদে উদযাপন করি। সাধারণ সতর্কতা আপনাকে, আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বাঁচাতে পারে এবং আমাদের সম্মিলিত সতর্কতা আসন্ন ঈদ উদযাপনকে পুরো দেশের জন্য আরও সুখী এবং নিরাপদ করে তুলতে পারে। সবাইকে ঈদ মোবারক!