চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'আম্পানের' প্রভাবে আমের ক্ষতি

প্রকাশ : ২১ মে ২০২০, ১৭:২৩

আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাকার মৌসুমে 'সুপার সাইক্লোন' বা 'অতি প্রবল ঘূর্নিঝড়' 'আম্পানের' প্রভাবে আমের ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

গত বুধবার (২০ মে) রাত থেকে আম্পানোর প্রভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে থাকে জেলা জুড়ে। যা রাত গভীর হবার সাথে সাথে বাড়তে থাকে। এর সাথে ছিল হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি।

বৃহস্পতিবার(২১ মে) সকাল পর্যন্ত এমন অবস্থা চলার পর কমে আসে অনেকটা থেমে থেমে বয়ে যাওয়া দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া প্রবাহ। দু'দিন ধরে এমন ঝড়ে আমের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ভেঙ্গে ও উপড়ে গেছে কিছু গাছ। তবে ডাল ভাঙ্গার পরিমানই বেশি। এছাড়া ঝরে গেছে প্রচুর আম। এ বছর এমনিতেই ফলন ইদানিংকালের মধ্যে সবচেয়ে কম। 'আম্পান' এর উপর হয়েছে মরার উপর খাড়ার ঘা। হাতাশায় ফেলেছে কৃষকদের।

সদর উপজেলার মসজিদপাড়া গ্রামের আমচাষী সাইফুল ইমলাম (৫০) বলেন, তার সদর ও গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নে ৩টি বাগান রয়েছে। ঝড়ে তার গাছের প্রচুর আম পড়ে গেছে। সদর উপজেলার রামকৃষ্টপুর গ্রামের পুরোনো আমচাষী মন্টু মিয়া(৬০) বলেন,তার বরেন্দ্রাঞ্চল,চাঁপাই সীমানার নওগার পোড়শা,নিয়ামতপুর এলাকায় বাগান রয়েছে। ঝড়ে আম পড়ে ক্ষতির দাবি করেন তিনি।তিনি বলেন,ক্ষতি নিরুপণ করতে সময় লাগবে।

জেলা সদর সহ পাঁচ উপজেলা থেকেই ঝড়ে আম ঝরে পড়ে ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে নিজে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করেছেন ও আমচাষীদের সাথে কথা বলেছেন। এছাড়া সারা জেলার মাঠ পর্যায়ের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেছেন। ডিডি বলেন, এবার জেলায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হযেছে। আম্পানের প্রভাবে এর শতকরা ৫ থেকে ৬ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতি হবে। সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় শতকরা ৫ ভাগ করে আংশিক বা পুরো ক্ষতি হবে। সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে নাচোলে। গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটে ৫ থেকে ৬ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। শিবগঞ্জে ফজলি আমে ক্ষতি হয়েছে বেশি। জেলাব্যাপাী ছোট গাছগুলিতে ক্ষতির পরিমান সবচেয়ে কম।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সলেহ আকরাম বলেন, সদরের ৫ হাজার ১২৫ হেক্টর আমবাগানের মধ্যে ২ হাজার হেক্টর জমির বাগানে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। যা প্রায় ৬শ' টন ও ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার সমপরিমান। সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ঝড়ে আমের ক্ষতি হবার কথা স্বীকার করে বলেন,আরও কয়েক দিন পর জেলার পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তও মাঝে মাঝে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো ও দমকা হাওয়ার প্রতি তিনি ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, আরও কয়েকদিন ধরে আম ঝরবে।

কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে ঘুরে জেলাব্যাপী আমের ক্ষতির  চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বৃহস্পতিবারও বিরুপ আবহাওয়া থাকায় ও ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলায় পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আম নিয়ে এ মৌসুমের শুর থেকেই চিন্তায় কৃষক,বাগানী ও কৃষি বিভাগ। ভাল মুকুল হলেও তার অনেকাংশ নষ্ট হয় অসমেয়র(ফাল্গুনের) বৃষ্টিতে। ৭০ ভাগ মুকুল টিকেছে বলে দাবি ছিল কৃষি বিভাগের। যদিও চাষীদের বক্তব্য মুকুল ছিল এর চাইতে কম। আম বড় হতে থাকলে শুরু হয় করোনার প্রভাব।লকডাউনে বাজারজাতকরণ,পরিবহন নিয়ে চিন্তায় পড়ে চাষীরা। বেশিরভাগ চাষী এখনও তাদের বাগান বিক্রি করতে পারেন নি। এরপর ঘূর্নিঝড় আমপানের ছোবলে চাষীদের অবস্থা দিশেহারা।

তবে এই ঝড়-বৃষ্টিতে আমের কিছু উপকারও বয়ে আনে। বৃষ্টির পানি আমের বোটা শক্ত করে। আমের বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

এদিকে ধানের ক্ষতির কথা কৃষকরা দাবি করলেও কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় ৭৪ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বাকী বিআর-২৯ এর মত প্রজাতির কিছু ধান মাঠে থাকলেও তেমন একটা ক্ষতি হবে না। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত