বঙ্গোপসাগরে ভাসতে থাকা ২৮০ রোহিঙ্গা ভাসানচরে কোয়ারেন্টিনে

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২০, ১৮:৫৫

সাহস ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাসতে থাকা ২৮০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ভাসানচরে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারও শুক্রবার সকালে তাদের ভাসানচরে নেয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

আজ ৮ মে (শুক্রবার) বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আল-জাজিরা এমন খবর দিয়েছে।

এর আগে ৭ মে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের জলসীমায় রোহিঙ্গাদের বহনকারী জীর্ণ নৌকাটি দেখা যায়। খবরে বলা হয়, উদ্ধারের সময় এসব রোহিঙ্গা প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিল। তাদের খাবার ও পানি দেয়া হয়েছে।

এরপর নৌকাটিকে নিয়ে যাওয়া হয় নোয়াখালীর ভাসানচরে। সেখানে গত ৪ মে আরও ২৮ রোহিঙ্গাকে পাঠানো হয়েছিল।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যা থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্টের শেষ দিকে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।

তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার বিরান দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এ লক্ষ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১০ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সরকার বলছে, রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য সব ব্যবস্থাই ভাসান চরে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে গেলে কক্সবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্প জীবনের চেয়ে ভালো থাকবে তারা।

এখন করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সাগরে নৌযান থেকে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের কোয়ারেন্টিনের জন্য ওই স্থাপনা ব্যবহৃত হচ্ছে।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে জনাকীর্ণ পরিসরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটলে তা ভয়ানক হয়ে ওঠার ঝুঁকি রয়েছে।

গত সপ্তাহে সাগরে একটি নৌযানে ভাসতে থাকা ২৮ রোহিঙ্গা ও এক বাংলাদেশি দালালকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই চরে এখন বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কও রয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জলসীমায় রোহিঙ্গাবাহী আরও কোনো নৌযান আছে কি না, সে বিষয়ে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড নজর রাখছে।

পাঁচশর মতো রোহিঙ্গাকে নিয়ে পাচারকারীরা সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের ট্রলার সাগরে ভাসছে।

রোহিঙ্গাদের নৌযান ভিড়তে দেবে না বলে আভাস দিয়েছে থাইল্যান্ডও।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশর উপকূলরক্ষীরা রোহিঙ্গাদের একটি নৌযান উদ্ধার করেন। যেটা দুই মাস আগে মালয়েশিয়া ফিরিয়ে দিয়েছিল।

প্রায় ৩৯০ জন অভুক্ত রোহিঙ্গা ওই নৌযানে ছিলেন, যাদের অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের নিচে। তাদের মধ্যে ১০০ জনের মতো না খেয়ে মারা যান বলে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছিলেন।

মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্সকে (এমএসএফ) ১৪ বছরে এক কিশোরী বলেছিল, অনেকের পা ফুলে যায় এবং অবস হয়ে পড়েন।

‘অনেকে মারা যান এবং তাদের সাগরে ফেলে দেয়া হয়। সাগরে আমরা নিঃসম্বল অবস্থায় ছিলাম, প্রতিদিনই মানুষ মরছিল। আমাদের মনে হচ্ছিল, আমাদের নরক থেকে আনা হচ্ছে।’

ওই নৌযান থেকে উদ্ধার হওয়াদের চিকিৎসা দেয়া এমএসএফের একজন টিম লিডার বলেন, ‘তাদের হাড্ডিসার দেহে অনেকের শুধু প্রাণটাই অবশিষ্ট ছিল।’

সূত্র: রয়টার্স ও আল-জাজিরা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত