পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে কিশোরগঞ্জের ৬ গ্রাম

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১৫:৩৩

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।গ্রামের পুরুষেরা গ্রেপ্তার এড়াতে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। পবিত্র রমজান মাস ও তার উপরে করোনা ভাইরাস এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার(২৭এপ্রিল) মধ্য রাতে পুলিশের এমন ঘটনায় উক্ত এলাকার মানুষদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
 
মঙ্গলবার(২৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে সাংবাদিকরা গিয়ে দেখেন ওই এলাকার কালিকাপুর মাঝাপাড়া, বালাপাড়া, সুরিপাড়া, ময়দানপাড়া, গফুরপাড়া ও ওমরপাড়া গ্রামে বৃদ্ধ ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই।নিস্তদ্ধ গ্রামের নারীরা নিজ নিজ বাড়িতে আতঙ্কের মধ্যে অবস্থান করছেন। অনেকে বয়স্ক গৃহবধু জানান, গভীর রাতে পুলিশ সদস্যরা এসে পাকিস্তানী বাহিনীর মত ব্যবহার করতে থাকে।পুলিশ বিভিন্ন বাড়ির ঘর ও জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর করেছেন। এমনকি একজনের ঘরে থাকা ২০ হাজার টাকা খোয়া যায়। বিকেল ৪টার দিকে দেখা যায় পুলিশের একটি দল পুনরায় ওই সকল গ্রামে আসামী ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে। 
 
এর আগে গতকাল সোমবার(২৭ এপ্রিল) দুপুরে পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর হাটখোলা গ্রামের ঈদগা ময়দান নদী ভাঙ্গনের হাত হতে রক্ষার্থে বালু দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ নির্মানে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে ওসি(তদন্ত) সহ তিনজন আহত হয়।ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যেই ২৫ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত দেড় শতাধিক গ্রামবাসীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন পুলিশ। মামলা নম্বর-১০।
 
এলাকাবাসী জানায়, উক্ত ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থানায় পুলিশের পক্ষে এসআই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ এনে উক্ত এলাকার নামীয় ২৫ জন ও অজ্ঞাত দেড় হাজার জনকে আসামী করা হয় তাতে। ওই মামলার আসামী ধরতে সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ অভিযানের নামে বাড়ি বাড়ি তান্ডব চালিয়ে ভাঙ্গচুর করে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধু অভিযোগ করে জানান, তিনি সিজারের রোগী। তার স্বামী রাতে বাড়িত ছিলনা। মধ্যরাতে পুলিশ এসে দরজা খুলতে বলেন। আমি সিজাররোগী হওয়ায় বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। পুলিশ আমার ঘরের টিনের বেড়া ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে আমাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমি তাদের বলি আমি সিজার রোগী। এরপর আমার ঘর তল্লাশী চালায় তারা। সকালে উঠে দেখি ঘরের বিছানার নিচে রক্ষিত ২০ হাজার টাকা নেই।
 
গ্রামের বয়স্ক এক স্কুল শিক্ষক জানান, পুলিশ এসে আমার বাড়ির দরজায় জোড়ে জোড় লাথি মারতে থাকে। আমি উঠে দরজা খুলে দিলে তারা আমাকে হাতকড়ি পড়িয়ে আমার দশম শ্রেনী পড়ুয়া ছেলেকে খুঁজতে থাকে। পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধনের কার্ডটি জোড়পূর্বক নিয়ে যায়।
 
এ ব্যাপারে কিশোরীগঞ্জ থানার ওসি হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের উপর হামলার ঘটনার মামলায় পুলিশ আসামী ধরতে অভিযান চালিয়েছে। মামলার আসামীরা সকলে পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন কোনো  গ্রামে পুলিশ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেনি।
 
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত