কৃষি খাতে ৫% সুদে ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা

প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২০, ১৪:০৪ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৪৫

অনলাইন ডেস্ক

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। তাই কোনো জমি অনাবাদি না রাখার নির্দেশ দিয়ে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ ১২ এপ্রিল (রবিবার) গণভবন থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে এ প্রণোদনার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি স্কিম গঠন করবে। এখানে শুধু কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ড তৈরি করব। এখানে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ।’

তিনি জানান, ‘এই তহবিল থেকে গ্রামাঞ্চলে যাঁরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি, তাঁদের দেওয়া হবে। যাঁরা পোলট্রি, কৃষি ফার্ম, ফলমূল, মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন করবেন, তাঁরা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন, যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং সরবরাহ হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি সেটা চলমান রয়েছে। সেটা হলো কেউ পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এটা আমরা আগেই চালু করেছি এটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমরা যে নতুন স্কিমটা নিচ্ছি ৫০০০ কোটি টাকার একটা প্রণোদনা। এখান থেকে আমরা মাত্র ৫ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বরাদ্দ দেব। এই তহবিল থেকে গ্রাম অঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী; তাদের জন্য ঋণ দেওয়া হবে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সকল কর্মকাণ্ডে এখান থেকে সহায়তা পাবেন।’

কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিকাজ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে বোরো ধান উঠবে। আর কৃষক যেন এই ফসলের ন্যায্য দাম পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গতবারের চেয়ে বেশি এবার ধান চাল ক্রয় করবে। দুই লাখ মেট্রিক টন বেশি ক্রয় করবে।’

তিনি বলেন, ‘সারের ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা, বীজের জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং কৃষকদের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে, এখানে কিন্তু খাদ্যাভাব মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। আমাদের মাটি উর্বর। আমরা কিন্তু নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অনেককে সাহায্য করতে পারব যদি আমরা যথাযথভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে পারি। সেই উৎপাদন করতে যাতে দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। কারও জমি যেন অনাবাদি না থাকে।’ 

বাংলা নববর্ষে বাইরে জনসমাগম করে কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘অনেকেই কথা শুনতে চান না। যার কারণে সংক্রমিত হয়। অনেকগুলো জেলায় সংক্রমিত হয়েছে। এটা যেন না বাড়ে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। পয়লা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। পরিবার উৎসব নিয়ে করুন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্যশস্য যা উৎপাদন করা হচ্ছে, সেগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করা বা যাঁরা ধান কাটতে যাবেন, তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসন–পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ একেবারে বন্ধ থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান খোলা থাকবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে কিছু কিছু উদ্যোগও নেওয়া যেতে পারে মানুষের বাসায় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার। এতে কিছু লোকের কর্মসংস্থানও হবে।’

তিনি বলেন, ‘হাটবাজার পুরোপুরি বন্ধ না রেখে বড় মাঠ বা খোলা দেখে নির্দিষ্ট জায়গায় দূরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে এক দিন অন্তত করা যেতে পারে। এতে অনেক মানুষের ভিড় যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুর্যোগ আসে, কিন্তু সেটা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়।’