প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা মেনে চলার আহ্বান কাদেরের

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৭:২৬

সাহস ডেস্ক

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশের সবাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) নিজের সরকারি বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতিসংঘের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ভয়াবহ সংকট আর কখনও সৃষ্টি হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দ্য ক্রাইসিস ইস ফর ফ্রম ওভার। কবে যে সংকটের শেষ হবে, তা এখনও পর্যন্ত কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছে না। এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সারাবিশ্ব চলছে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। দেশে দেশে সংকট আরও ঘনীভূত করছে। বাংলাদেশে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছি অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী প্রশাসন, সেনাবাহিনী, আমাদের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই এগিয়ে আসছেন। চিকিৎসক-নার্সসহ আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালনে কেউ কোনো অবহেলা করছেন না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, একদিকে, শেখ হাসিনার সরকার সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এদের পাশে দাড়িয়েছে। অন্যদিকে, আমাদের পার্টির প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরাও এগিয়ে এসেছেন। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক দিক। এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের পার্টির প্রতিনিধিরা যার যার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে যার যার দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানাচ্ছি। সংকটে জনমতকে যাতে কেউ বিভ্রান্ত করতে না পারে, মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেষ্ট থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরা‌সের কার‌ণে সৃষ্ট পরিস্থিতি থে‌কে উত্তর‌ণের জন্য ৩১ নি‌র্দেশনা দি‌য়ে‌ছেন প্রধানমন্ত্রী‌ শেখ হাসিনা। বৃহস্প‌তিবার (২ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং‌য়ের ফেসবুক পে‌জে এই নি‌র্দেশনাগু‌লো দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। নি‌র্দেশনাগু‌লো হ‌চ্ছে:

১) করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

২) লুকোচুরির দরকার নেই, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

৩) পিপিই সাধারণভাবে সকলের পরার দরকার নেই। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। এই রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত পিপিই, মাস্কসহ সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখা এবং বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

৪) কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

৫) যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে।

৬) নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

৭) নদীবেষ্টিত জেলাসমূহে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮) অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে হবে।

৯) পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হ‌বে। সারাদেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

১০) আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতীয় এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাগণ যথাযথ ও সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন- এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

১১) ত্রাণকাজে কোনও ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।

১২) দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে।

১৩) সোশ্যাল সেফটিনেস কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

১৪) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে।

১৫) খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। কোন জমি যেন পতিত না থাকে।

১৬) সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। যাতে বাজার চালু থাকে।

১৭) সাধারণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

১৮) জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে যাতে জনসমাগম না হয়। ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নববর্ষ উদযাপন করতে হবে।

১৯) স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজের সকল স্তরের জনগণকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসন সকলকে নিয়ে কাজ করবে।

২০) সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

২১) জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন।

২২) সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা/ভ্যান চালক, পরিবহন শ্রমিক, ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবা নারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

২৩) প্রবীণ নাগরিক ও শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২৪) দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (এসওডি) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সকল সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।

২৫) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও নিয়মিত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সং‌শ্লিষ্ট‌দের কাজ করতে হবে।

২৬) আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় করবেন না। খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।

২৭) কৃষকগণ নিয়মিত চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।

২৮) সকল শিল্প মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখবেন।

২৯) শিল্প মালিকগণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখবেন।

৩০) গণমাধ্যমকর্মীরা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৩১) গুজব রটানো বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। গুজবে কান দেবেন না এবং গুজবে বিচলিত হবেন না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত