‘স্বাধীনতাবিরোধীরা যখনই ক্ষমতায় গেছে, তখনই দেশ পিছিয়ে গেছে’

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২০, ১৩:৫৩

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নিয়ে গেছে। তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল না। এ জন্য তারা দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি। স্বাধীনতাবিরোধীরা যখনই ক্ষমতায় গেছে, তখনই দেশ পিছিয়ে গেছে।’

৫ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যান। একটি প্রদেশকে দেশে পরিণত করেছেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘যখন গোলায় কোনো ধান ছিল না, ব্যাংকে কোনো রিজার্ভ ছিল না। বরং ফসলের মাঠে আগুন দিয়ে পাকবাহিনীরা ফসল পুড়িয়ে দিয়েছে। ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করতো। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তখন পঁচাত্তরের ১৫ ই আগস্ট তাকে হত্যা করা হয়। এরপর বাংলাদেশের উন্নয়ন থমকে যায়। ক্ষমতায় আসে যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না তারা। এরপরে বাংলাদেশের আর কোনো উন্নয়ন হয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দেখা গেল, গবেষণার ব্যাপারে তাদের কোনো বরাদ্দ নেই। আমি দেশের উন্নয়নে গবেষণার দিকে গুরুত্ব দিলাম এবং তাদেরকে থোক বরাদ্দ দেয়া হল। এই গবেষণার ফলে বাংলাদেশের খাদ্য ফসল ও ফলমূলের উৎপাদন বেড়ে গেল। এরপর ২০০১ সালে আমরা আর ক্ষমতায় আসতে পারি নাই। আবার স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে। তখন বাংলাদেশের উন্নয়ন আবার থেমে যায়। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পরে আবার গবেষণার দিকে মনোযোগ দেই। সেই থেকে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছি। এসব গবেষণার ক্ষেত্রে খাদ্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, প্রাণী সম্পদ ও হাস-মুরগির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। আজ সারা বছর তরকারির ও ফলমূলের অভাব হয় না, এগুলো আমাদের গবেষণার ফসল। গবেষণার ফলে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এই বিজয়ী জাতি কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। তারা কখনো অবহেলার শিকার হতে পারে না। আমরা বিভিন্ন বিভাগে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রতিটি জেলায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি এবং বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এসকল স্থানে নিরাপত্তা জোরদার এবং নতুন নতুন উৎপাদ ও উন্নয়নের জন্য গবেষণার প্রয়োজন আছে।’ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের তিনি নতুন নতুন গবেষণা করার জন্য অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আরও বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। আইয়ুব খানের সময় নবম শ্রেণিতে যে ভাগ তৈরি হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত চলে আসছে। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেককিছু জানতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘এসএসসি পর্যন্ত একসঙ্গে লেখাপড়া করলে ভালো হয। আমাদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। তুলনামূলকভাবে বিদেশের অনেক উন্নত দেশের চাইতে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা অনেক মেধাবী।’

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের দেশকে ভালবাসতে হবে, ভালোভাবে লেখাপড়া এবং খেলাধুলা করতে হবে। বাবা-মার কথা শুনতে হবে। তাহলেই তোমরা মানুষ হতে পারবে। আর যেন বাংলাদেশ থমকে না দাঁড়ায় এই দায়িত্ব আজকের বিজ্ঞানীদের নিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে রেখে আমরা ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের শিশুরা যেন উন্নত জীবন পায়, তারা যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দেশ এই পরিচয়ে বসবাস করতে পারে সেজন্য আমরা নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। গ্রামের অর্থনীতিকে আমরা আরও শক্তিশালী করছি। গ্রামের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ তত এগিয়ে যাবে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নে গবেষণার গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকে স্ট্রবেরি বাংলাদেশে উৎপাদন করা হচ্ছে। সেটাও কিন্তু গবেষণার ফসল। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে দেখলাম- কেউ বিজ্ঞান শিক্ষা নিতে চায় না। কম্পিউটার কেউ ছুঁয়েও দেখতো না। আমরা উদ্যোগ নিলাম, ট্যাক্স তুলে দিলাম, এখন সবার হাতে হাতে ল্যাপটপ। প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে, সেটা দিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনে যেন সুন্দর একটা জীবন পায়, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, শহর-গ্রাম সবখানেই যেন উন্নয়ন হয়। উন্নয়নের সব পরিকল্পনা গ্রামকে ঘিরেই করে যাচ্ছি। পুরো দেশটা যেন সমানভাবে উন্নত হয় সেসব ভেবেই কাজ করছি।’

দেশ স্বাধীনের পরেই বঙ্গবন্ধু আধুনিক শিক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ রোগে মারা গেলে আগে আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিতো, হায়াত নেই তাই আল্লাহ বাঁচলো না বলা হতো।’

এই পরিস্থিতির উন্নয়নে ড. কুদরত-ই-খুদার মতো একজন বিজ্ঞানীকে দিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি বঙ্গবন্ধু যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যাত্রা শুরু করতেও পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি সে সময়েই।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘এবারের অর্থবছরে ৩ হাজার ২০০ জনকে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা ‘প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছি। সেখান থেকেও উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অর্থ দিয়ে থাকি।’ শিক্ষার জন্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত্র সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত