পাঁচ পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা তাপসের

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:০৭

সাহস ডেস্ক

পাঁচ পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পাঁচ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ঐতিহ্যের ঢাকা, সচল ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

তাপস বলেন, ঢাকার উন্নয়নের জন্য এখন দরকার সঠিক নেতৃত্ব। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। অনেক অবহেলা, গাফিলতিতে ঢাকা অপরিকল্পিত ও দূষণ আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে। ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আপনাদের সমর্থন ও ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে এই পাঁচটি রূপরেখা নিয়ে অগ্রসর হতে চাই।

ঐতিহ্যের ঢাকা

তাপস বলেন, চারশ’ বছরের পুরনো আমাদের এই ঢাকার রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যের উজ্জ্বল ছবি, ঐতিহ্যের গভীর শেকড় ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব। পর্যটনের জন্য ঢাকা হতে পারে অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র। এখানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ অনন্য। সাংস্কৃতিক ধারায় রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পহেলা বৈশাখ, ঘুড়ি উৎসব, চৈত্র-সংক্রান্তিসহ অজস্র উৎসব। আমি নির্বাচিত হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে ‘ঐতিহ্য প্রাঙ্গণ’ হিসেবে গড়ে তুলবো।

সুন্দর ঢাকা

বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা—দুই নদীর অববাহিকায় পত্তন হওয়া আমাদের এই ঢাকা। এমন শহর পৃথিবীতে বিরল! ‘সুন্দর ঢাকা’ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উদ্যান নির্মাণ, সবুজায়ন, ছাদবাগানে উৎসাহ, পরিবেশবান্ধব স্থাপনা বৃদ্ধি, বায়ু ও শব্দ দূষণরোধসহ শরীর ও চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, শরীর চর্চা কেন্দ্র এবং নারী-শিশু ও প্রবীণদের জন্য হাঁটার উন্মুক্ত স্থান, আধুনিক মানের কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা। সর্বসাধারণের সুবিধার্থে সাধারণ ও ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের ব্যবস্থা, দুস্থ-অসহায়দের কল্যাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।

খালগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ-খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নর্দমা নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও জলাধার সংরক্ষণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দৈনন্দিন ভিত্তিতে সড়কের ওপর থেকে আবর্জনার স্তূপ অপসারণ করা হবে। সড়ক থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।


সচল চাকা

যানজটের কারণে রাস্তায় চলাচল হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও ফিরে আসতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের বিড়ম্বনা অপরিসীম। গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু রাস্তায় দ্রুতগতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীরগতির যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষের হাঁটার ব্যবস্থা করবো। নদীর পাড় থাকবে প্রশস্ত, সেখানে হেঁটে চলা যাবে, চালানো যাবে সাইকেল, চলবে রিকশা। এছাড়া, দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য থাকবে আলাদা পথ, থাকবে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। রাস্তা পারাপারের সুব্যবস্থাসহ নগর ঘুরে দেখার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে প্রয়োজনীয় সড়ক বাতি।

সুশাসিত চাকা

আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ঢাকায় একসময় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ছিল। মাদক, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধের ব্যবস্থা ছিল। মাদক নির্মূল, জুয়া, কিশোর অপরাধসহ নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত বিভিন্ন অপরাধ রোধসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যকর ও সংশোধনকেন্দ্র নির্মাণ করবো। ঢাকা দক্ষিণ হবে বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য খোলা থাকবে। ব্যবসায়িক লাইসেন্স ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাড়ানো হবে না ।

মশকের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস, মশক নিধনে দৈনন্দিন ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, হাসপাতাল-ডিসপেনসারি ও প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনসহ মাতৃসদন, পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংখ্যক কারিগরি-ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। হতদরিদ্র মানুষের সন্তান-সন্ততির শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের শিক্ষা, বিনোদন ও চিকিৎসাসেবায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে ফায়ার হাইড্রেন্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পাড়া-মহল্লায় অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি প্রবেশের কার্যকর পদক্ষেপসহ প্রয়োজনে নিজস্ব দমকল বাহিনী গঠন করা হবে।

উন্নত ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ-এর ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে উন্নত রাজধানী তথা উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার কোনও বিকল্প নাই। অনেক সময় হয়তো পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। পাঁচ বছর মেয়াদি বিভিন্ন প্রকল্পসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে নগরীর উন্নতি সাধন, ইমারত নির্মাণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ, নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের জনগণের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণসহ প্রত্যেকটি সড়ক ও নর্দমার উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মান নিরূপণ করে অন্তত ১০ বছরের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা হবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ বিবেচনায় নিয়ে জমির যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। জলবায়ু সংক্রান্ত উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ছাত্র ও কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হোস্টেল গড়ে তোলা হবে। জনগণকে প্রদেয় করপোরেশনের সব সেবা যথা−বাণিজ্য লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন সনদ, প্রত্যয়নপত্র, গৃহ কর, পৌর কর, অন্যান্য কর তথ্য প্রযুক্তিগত সেবার আওতায় আনা হবে। সব ক্ষেত্রে অনলাইন সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। নগরবাসী ঘরে বসেই কর এবং নির্ধারিত ক্ষেত্রে ফি পরিশোধ সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। করপোরেশন পরিচালনায় তথ্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার প্রচলন করা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত করা হবে। ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন এবং নাগরিক সেবা ও সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ নগর অ্যাপ চালু করা হবে। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত