না ফেরার দেশে বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুন চৌধুরী খঞ্জনি

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:০৮

সাহস ডেস্ক

বিজয়ের মাসে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও নিপীড়িত বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুন চৌধুরী খঞ্জনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কুমিল্লা নগরীর পূর্ব বাগিচাগাঁও বড় মসজিদ সংলগ্ন মেয়ের বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন।

তিনি এক মেয়ে, জামাতা, নাতি-নাতনিসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বীরাঙ্গনা আফিয়ার মেয়ে রোকসানা বেগম মায়ের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, ১৯৩৯ সালে ফেনী জেলার বরইয়া চৌধুরী বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৩ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ দিঘি ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রুহুল আমিন মানিক ওরফে হেকমত আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। ১৯৬৬ সালে স্বামী হেকমত আলীর মৃত্যু হয়।

স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা জানান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরাঙ্গনা খঞ্জনির স্বামীর বাড়ি সংলগ্ন জগন্নাথ দিঘির পাশে ছিল হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে সোনাপুরসহ আশে পাশের গ্রামের মেয়েদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। স্থানীয় রাজাকাররা খঞ্জনিকে হাবিলদার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বীরাঙ্গনা খঞ্জনি ক্যাম্পে আটক ছিলেন। আটক থাকা অবস্থায় হানাদার বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এলাকার গরীব মানুষকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করতেন তিনি।

কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খঞ্জনিকে স্বজনরা গ্রামে জায়গা দেননি। এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খঞ্জনি মানসিক ভারসাম্যহীন কুমিল্লায় মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। ২০১৫ সালে সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখিতে সরকারের নজরে আসে তিনি। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদও তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ২০১৮ সালে সরকার তাকে বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করে।

মঙ্গলবার সকালে নগরীর পূর্ব বাগিচাগাঁও জামে মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে দাফনের জন্য চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হবে।   

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, বীরাঙ্গনা আফিয়া খাতুন চৌধুরী খঞ্জনিকে দাফনের পূর্বে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রদানের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত