যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৩০

সাহস ডেস্ক

মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ভোরের প্রথম কিরণ থেকেই জেগে উঠে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিসৌধ। হাজারও মানুষের ঢলে স্মৃতিস্তম্ভের খোলা জানালাও যেনো শ্রদ্ধা জানাচ্ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরের প্রথম কিরণ থেকেই সাধারণ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি সহ সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দেশের সূর্যসন্তানদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিটিভির সাবেক ডিজি মো. হামিদ বলেন, এখনো একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে শহীদ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার সাহস রাখে দৈনিক সংগ্রাম। এদের যথাযথ শাস্তি না দিলে যে লক্ষ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে তা পূরণ হবে না। যদিও এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, দৈনিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা শমী কায়সার বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সঠিক তালিকা করতে হবে। একইসঙ্গে রাজাকারদেরও সঠিক তালিকা করতে হবে।

১৯৭১ সালের এ দিনে দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, লেখক ও সাংবাদিকসহ অন্যান্য মেধাবী ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। পরে তাদের মরদেহ রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।

পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঠাণ্ডা মাথায় এ গণহত্যা চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যাতে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ডা. ডালিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ডা. ফজলে রাব্বি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেন, সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সান্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান, এএনএম গোলাম মুস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক ও সেলিনা পারভিন।

১৪ ডিসেম্বরের এ দুঃখজনক ঘটনার স্মরণে সরকার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ তার বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে বলেন, বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত হলেই তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তার বাণীতে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। জাতি চিরদিন তাদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সেই সাথে শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাবেন।

বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।

এদিকে দিবসটির মর্যাদা রক্ষার্থে অনুষ্ঠান পালনে মাইক ও লাউডস্পিকার ব্যবহার না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত