অনুমতি নিয়ে খালেদাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে বলেছেন আদালত

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৩

সাহস ডেস্ক

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন, মানবিক কারণে তারা জামিন চাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে অর্থ আত্মসাতের মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব।

উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ করে দিয়েছেন। তবে আদালত খালেদা জিয়ার সম্মতিতে তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

জামিন খারিজের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব। তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিন বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তারপরও আদালত তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। জামিন খারিজের পূর্ণাঙ্গ আদেশ পাওয়ার পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

জামিন খারিজের আদেশের পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তখন আদালত এলাকায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু নামে স্লোগান দেন। শুনানির শুরুতে জামিনের স্বপক্ষে আদালতে কথা বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। আর খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার বক্তব্য শেষ হলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন।

খালেদার দুই আইনজীবী যা বলেন, এই আদালত দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাইছি। খালেদা জিয়া একজন সুস্থ মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তাঁর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, আমি ডাক্তার না। তবু যেটুকু বুঝি, এই মেডিকেল প্রতিবেদন বলছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। মানবিক কারণে আমরা খালেদা জিয়ার জামিন চাচ্ছি। তাঁর অবস্থা এমন যে তিনি পঙ্গু অবস্থায় চলে গেছেন। হয়তো ছয় মাস পর তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হবে। আর কোথাও গিয়ে লাভ নেই। এ জন্য আমরা বারবারই আদালতের কাছে আসছি, বলছি, মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হোক।

খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, আমাদের দেশের বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে, রাজনীতি করলে জেলে যেতে হবে। রাজনীতি আর জেল পাশাপাশি। জেলে থাকলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। আর ক্ষমতায় থাকলে তার থেকে আর ভালো কেউ নেই। অসুস্থ ও বয়স্ক নারী খালেদা জিয়া। তাকে জামিন দেওয়ার আবেদন জানান আদালতের কাছে।

জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, আসামি খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা বারবারই বলছেন, তার সাজার পরিমাণ কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো তার সর্বমোট সতেরো বছর কারাদণ্ড হয়েছে। এই মামলায় যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কোনো সাধারণ মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন আদালতের সামনে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার যেসব রোগ, তা দীর্ঘমেয়াদি রোগ। খালেদা জিয়ার যেসব রোগে কত বছর ধরে ভুগছেন তার ফিরিস্তি আদালতকে পড়ে শোনান তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খালেদা জিয়া ডায়াবেটিসে ভুগছেন ২০ বছর ধরে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন ১০ বছর ধরে। আর্থরাইটিস ভুগছেন ৩০ বছর ধরে। মেডিকেল প্রতিবেদন বলছে, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তার ডায়াবেটিসে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর তার যেসব রোগ, সেগুলোর চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব।

মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, তিনি হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাচ্ছেন। তার গৃহকর্মী ফাতেমা হাসপাতালেই তার সঙ্গে অবস্থান করছেন। বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তার রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন না। তিনি থাকছেন হাসপাতালের একটি ভিআইপি কেবিনে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দণ্ডিত হন খালেদা জিয়া। একই বছরের অক্টোবর মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার দণ্ড পাঁচ বছর থেকে দশ বছর হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল শুনানি হাইকোর্টে বিচারাধীন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য শেষ হলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। খুরশীদ আলম খান নজির তুলে ধরে বলেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের অন্তর্নিহিত ক্ষমতার ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। হাইকোর্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থেকে অর্থ আত্মসাতের মতো অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদনের ব্যাপারে দুদকের আইনজীবী আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া কিছু ব্যাপারে সম্মতি দিচ্ছেন না। কোনো রোগী যদি চিকিৎসককে সম্মতি না দেন, তাহলে ওই চিকিৎসকের কি করার আছে। তিনি খালেদা জিয়ার জামিনের ঘোর আপত্তি করেন।

এজলাসে ৬০ আইনজীবী থাকা না থাকা:
সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আজকের শুনানিতে উভয় পক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবী থাকবেন।

কিন্তু শুনানি শুরু হলে দেখা যায়, উভয় পক্ষের কেউ-ই আপিল বিভাগের ওই কথা শোনেননি। সেই প্রসঙ্গেই আদালত উভয় পক্ষকে বলেন, ‘আপনারা কেউ কথা শোনেননি।’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। সবার সামনে সেই খাম খোলা হয়। পরে আদালত তা দেখেন। দেখতে দেওয়া হয় খালেদার আইনজীবীদেরও।

এর আগে সকাল ১০টা ৬ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা। এ সময় আদালত খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কেউ কথা শোনেননি।

কড়া নিরাপত্তা:
খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির আগের দিন অর্থাৎ গতকাল বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আজ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। সকাল থেকেই যারা আদালতে ঢুকেছেন তাদের প্রত্যেককে তল্লাশি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশ করার সবগুলো কেটে বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত