বিএনপি নেতা নদী ভরাটকারী এখন আওয়ামীলীগ নৌকা প্রার্থী

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৩

সাহস ডেস্ক
শাপলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক (ছবি : সংগৃহীত)

মো. আব্দুল খালেক একসময় ছিলেন বিএনপি নেতা, তিনি ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে হয়েছিলেন মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। নির্বাচিত হওয়ার পর পরই সবকিছুই যেন যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় পরিবর্তন ঘটে গেছে মো. আব্দুল খালেকের।  

নিজের এলাকার পাশাপাশি কক্সবাজারে গড়ে তুলেছেন রাজত্ব। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার সাম্রাজ্য। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা সিন্ডিকেট। গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ। 

কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদী দখল করে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করেছেন খালেক। প্যারাবন কেটা এবং নদী দখলের অভিযোগে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তার ক্ষমতার দাপটে সাড়ে নয় বছরেও প্রস্তাবিত নদীবন্দর নির্মাণ করতে পারছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাঁকখালী (কস্তুরাঘাট) নৌবন্দর স্থাপনে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটকে নদীবন্দর ঘোষণাপূর্বক বিআইডব্লিউটিএকে নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করাসহ বন্দর সীমানাও নির্ধারণ করা হয়। কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী চ্যানেল পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের ১ হাজার ২০০ একর জায়গাজুড়ে এ নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজারের সদর উপজেলা অংশে ৮২১ একর এবং মহেশখালী উপজেলা অংশে ৪৪৭ একর জমি রয়েছে। তবে সবটুকুই সরকারি খাসজমি। 

এরই আলোকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগো এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল শাখা কর্তৃক যৌথ জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। নৌবন্দরের জমি হস্তান্তরের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে একাধিকবার চিঠিও দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে এখন পর্যন্ত এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তর না করায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নৌবন্দর নির্মাণের কাজ।

যে স্থানটি ঘিরে সরকার নদীবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেয়, সে স্থানটিতে চলছে আব্দুল খালেকসহ প্রভাবশালীদের দখলের মহোৎসব। বিআইডব্লিউটিএ ৫১ জন প্রভাবশালী দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী অনেক রাজনৈতিক নেতারাও।

এ দিকে নদী দখলের অভিযোগ মাথায় নিয়েই আওয়ামী লীগ থেকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাও দিয়েছেন আব্দুল খালেক। যদিও নদী দখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের এক রায়ে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আব্দুল খালেক বলেন, যে জমিতে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়েছে, এটি দখল করা নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও রয়েছে।

সম্ভাব্য জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে যে স্থান ঘিরে নদীবন্দর হওয়ার কথা, সে স্থানে বেশকিছু দখলদার রয়েছে। যে কারণে জমি বুঝিয়ে দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে সংকটে পড়বে নদী।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কক্সবাজার জেলা কমিটির তালিকায় এখনো নাম আছে আব্দুল খালেকের। যদিও সময়ের ব্যবধানে তিনি আজ মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য। যিনি খালেক চেয়ারম্যান নামে সুপরিচিত।

এই বিষয়ে আব্দুল খালেক কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকরা বলছেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নয় বরং অনেকেই এখন গা বাঁচাতে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। যারা সুযোগ বুঝে রং পাল্টাতে পারে। অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা যা-ই হোক, ওরা কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে এটা উদ্বেগজনক। 

কারণ জামায়াত ও বিএনপির জামায়াতপন্থিরা সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রবেশ করে। কারণ তারা বাইরে থেকে কিছু করতে পারেনি, এখন ভেতরে থেকে কিছু করতে চায়।

এ দিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে শুদ্ধি অভিযান চলছে। আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জুয়াড়ি, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে গুরুত্ব পাচ্ছে দলে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদীদের ছেঁটে ফেলার বিষয়টি। একই সঙ্গে চলছে দলীয় নেতা-কর্মীদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির কাজ। এই ডাটাবেজ তৈরির মাধ্যমে দলে অনুপ্রবেশকারী রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত