বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড কমেছে: যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:১৮

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে পূর্বের তুলনায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের প্রবণতা ও বিস্তার কমেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। তবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিচারের প্রতিবন্ধকতা ও অভিযানের সময় নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ জঙ্গিবিরোধী ব্যাপক সফলতাকে সমালোচনার মুখে ফেলছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরিজম ২০১৮’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে এই মনোভাবের কথা তুলে ধরা হয়।

২০১৮ সালে আলাদা ঘটনায় এক সেক্যুলার লেখক হত্যাকাণ্ডের শিকার ও অপর এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মারাত্মক আহত হয়েছেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ মার্চ নিজেকে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সদস্য দাবি করা এক ব্যক্তি সিলেটের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে। তাকে ‘ইসলামের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। এই দুটি ঘটনার পরও ওই বছর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ও প্রবণতা কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী পরিকল্পিত হামলা ঠেকাচ্ছে, সন্দেহভাজন জঙ্গি নেতাদের গ্রেপ্তার আর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক জব্দ করছে। জঙ্গি ও জঙ্গিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকার সবসময় স্থানীয় জঙ্গিদের দায়ী করেছে। এরপরও ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৪০টি হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য এবং বাংলাদেশ থেকে অনুসারী সংগ্রহের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে। আইএস ও আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু প্রকাশনা, ভিডিও ও ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি যোদ্ধাদের কথা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালেও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় ছিল। আইনটিতে ২০১২ ও ২০১৩ সালে সংস্কার আনা হয়। ৫ এপ্রিল সরকার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দুটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রাইব্যুনাল দুটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিদেশি যোদ্ধা নিয়োগ ঠেকানোর পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও দেশটি বিদ্যমান আইনের অধীনেই সন্দেহভাজন বিদেশি যোদ্ধা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত ও প্রবেশ বন্দরে নিয়ন্ত্রণ জোরালো করতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়েছে। ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পদ্ধতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বহাল থাকলেও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি জানিয়েছে তাদের মানের ৭৭ দশমিক ৪৬  শতাংশই পূরণ করে এটি। ২০১২ সালে সর্বশেষ জরিপের সময় থেকে এই মান ২৬ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ আইনপ্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ইন্টারপোলের সঙ্গে ভাগাভাগি করলেও দেশটির কোনও সুনির্দিষ্ট ওয়াচলিস্ট নেই। এছাড়া তাদের কোনও মিথস্ক্রিয়ামূলক এপিআই সিস্টেম নেই।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ বাংলাদেশ পুলিশের অন্য সব সংস্থা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। এসব অভিযানে অনেক সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে, অনেক সময় এগুলোকে ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘শুটআউট’ বলে অভিহিত করা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় কমিটি ইমাম ও মাওলানাদের নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুলিশও জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা মোকাবিলায় ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান ও শিক্ষার্থীদের সহিংস জঙ্গিপন্থায় জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত