মেননের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত ১৪ দল

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০১

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক রাশেদ খান মেননের বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত জোটের সদস্যরা৷ এজন্য তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম৷

তবে মেনন বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারেনি এই কথাই তিনি বলেছেন৷

শনিবার বরিশালে দলীয় এক অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি৷ তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি৷ এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ৷'' বরিশালে দেয়া তাঁর ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জনগণ ভোট দিতে পারে নাই৷ এটা আমি বলেছি৷ তবে জনগণ যদি ভোট দিতে পারত তাহলে শেখ হাসিনাকেই জয়ী করত৷ জোটকেই জয়ী করত৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমি কোথাও বলিনি জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়নি বা আমাকে ভোট দেয়নি৷ আমি বলেছি জনগণ ভোট দিতে পারেনি৷ কথাটা সরাসরি হয়ে গেছে৷ কিন্তু একথা আমি নতুন বলিনি, আগেও বলেছি৷ পার্লামেন্টে বলেছি৷''

ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়ে গেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, তা কেন হবে? আমিতো সেটা বলিনি৷ আমি বলেছি  কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড এই নির্বাচনকে অশুদ্ধ বা অবৈধ করে না৷ কিছু লোকতো ভোট দিয়েছে৷ তাতে আমরা জয়ী হয়েছি৷ জোট জয়ী হয়েছে৷''

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে বিএনপির এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি তাদের এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি৷ আর আমার মতামত হলো আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে একথা আমি কোথাও বলিনি৷ আমরা মনে করি প্রশাসনের অতি উৎসাহ এবং বাড়াবাড়ি এর জন্য দায়ী৷''

আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের কয়েকজন নেতা এরইমধ্যে বলেছেন রাশেদ খান মেনন যা বলেছেন তা তিনি বিশ্বাস করলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত৷ ১৪ দলের শরীক সাম্যবাদী দলের প্রধান দিলীপ বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিনি কেন বলেছেন, তাঁর কথা সঠিক কিনা সেটার জবাব আমি দেব না৷ তবে তিনি যা বলেছেন তা পদত্যাগ করেই বলা উচিত ছিল৷ তিনি যা বলেছেন তার জন্য এখন তার পদত্যাগ করা উচিত৷ তার দু'টি অবস্থানতো একসঙ্গে হয় না৷''

এর জবাবে মেনন বলেন, ‘‘আমি পদত্যাগ করব না৷ পদত্যাগের প্রশ্ন আসে না৷ এটাতো শুধু নৈতিকতার প্রশ্ন নয়, এরসঙ্গে রাজনৈতিক প্রশ্ন জড়িত আছে৷ ১৯৮৬ সালেওতো বলা হয়েছিল মিডিয়া ক্যু হয়েছিল৷ তারপরওতো সবাই পার্লামেন্টে ছিলো৷ পদত্যাগ না করেও ভোটের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া যায়৷''

১৪ দলের পক্ষ থেকে রাশেদ খান মেননের কাছে তাঁর বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চাওয়া হবে৷ ১৪ দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আজ (সোমবার) আমরা এই বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসব৷ বৈঠকে আলাপ আলোচনা করে আমরা তাকে চিঠি দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব৷ তার জবাব দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷''

মেননের এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তার অবস্থান নিয়েতো আমরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছি৷ তাঁর মত একজন সিনিয়র নেতার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্যতো আমরা চিন্তাও করতে পারি না৷''

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উনি (মেনন) যা বলেছেন তা নতুন কিছু না৷ এটা দেশের সবাই জানেন৷ সারা বিশ্বের মানুষ জানেন৷ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে কী হয়েছে সেটা কারুর অজানা নয়৷''

প্রতিবেদন: ডয়চে ভেলে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত