অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১২:১৭

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ রাসেলসহ অপর দুই ভাইকে হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শেখ রাসেলের ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে হয়ত দেশের জন্য অনেক কিছু করত। মাঝে মাঝে মনে হয় ৫৪ বছর বয়সে কেমন হতো দেখতে তাকে? বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত চোখে থেমে যান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক ৬৭ সালে যখন কারাগারে গেলেন রাসেলের বয়স তখন ২ বছরও হয়নি। তখনই সে বাবার স্নেহ বঞ্চিত হলো। আমরা কারাগারে যেতাম আব্বার সঙ্গে দেখা করতে। রাসেল কিছুতেই আসতে চাইতো না। সে বাবাকে ছাড়া আসবে না। বাবাকে নিয়ে ঘরে ফিরবে। সেই সময় আমার বাবা বলতে বাধ্য হলেন, এটা আমার বাড়ি। আমি আমার বাড়িতে থাকি। তুমি তোমার মায়ের বাড়িতে যাও। তখনও সে ভালো করে কথাও বলতে পারে না। তারপরে সে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করত। তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে আসতে হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দিন আমরা জেলখানায় দেখা করতে যেতাম সেই দিন সে খুব অস্থির থাকত। ঘুমাতে চাইতো না, খেতে চাইতো না। অনেক সময় মধ্য রাতে উঠে বসে থাকতো, আমাদের সবাইকে ডাকতো। আমরা সব ভাই-বোন গিয়ে তার কাছে বসতাম। সে কিছু বলতে পারছে না। সে তার মনের ব্যথাটা জানাতে পারছে না। কিন্তু তার বেদনাটা আমরা বুঝতে পারতাম।

একাত্তরের যুদ্ধচলাকালীন সময়ের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খুব চাপা স্বভাবের ছিল, সহসাই কাউকে কিছু বলতো না। তার চোখে সব সময় পানি। যদি কখনো বলতাম তোমার চোখে পানি কেন? বলতো চোখে কী যেন পড়েছে। ওই টুকু ছোট বাচ্চা, সে তার নিজের মনের ব্যথাটা পর্যন্ত কীভাবে লুকিয়ে রাখতো আমার ভাবতেও অবাক লাগে।

তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই কামাল সে মুক্তিযুদ্ধে চলে গিয়েছিল। জামাল বন্দি খানা থেকে বের হয়ে সেও মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যখন আক্রমণ হতো, বিশেষ করে যখন এয়ার রেইড হতো। রাসেল সব সময় পকেটে একটু তুলা রাখতো। নিজের কানে দিত, ছোট্ট জয়ের কানে দিয়ে দিত। যেন ওই আওয়াজে জয়ের কোনো ক্ষতি না হয়। রাসেল সব সময় খুব খেয়াল রাখতো জয়ের প্রতি। স্বাধীনতার পর আব্বা যখন ফিরে আসলো। আপনারা দেখবেন সব সময় আব্বার পাশে রাসেল। রাসেল যেন আব্বাকে ছাড়তে চাইতো না।

তিনি বলেন, রাসেলের খুব সখ ছিল সে বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে। সেই ভাবে সে কিন্তু নিজেকেও তৈরি করতো। ছোট ছোট গরিব শিশুদের প্রতি তার দরদ ছিল। যখন গ্রামে যেত তখন অনেক শিশুদের জড়ো করতো। সে কাঠের বন্দুক বানাতো। এই শিশুদের জন্য মাকে বলতো যে কাপড়-চোপড় কিনে দিতে হবে। মা ঠিকই কাপড়-চোপড় কিনে দিতো।

শেখ হাসিনা বলেন, ওদেরকে নিয়ে সে প্যারেড করাতো। প্যারেড করানো শেষে তাদের খাবার দাবার দিত। আর সবাইকে ছোট ছোট এক টাকার নোটের বান্ডিল থেকে একটা করে টাকা দিত। এটা সে করবেই।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের ছয় বছর পর যখন দেশে আসি, যখন টুঙ্গিপাড়া যাই সেখানে একটা আলমারি ছিল। সেই আলমারির ভেতরে দেখি অনেকগুলো ছোট ছোট শিশুদের জামা তখনও পড়ে আছে। আমি জানতাম যে এইগুলো রাসেল ওই গ্রামের গরিব শিশুদের মাঝে বিতরণ করতো। তাদের আর্থিক সহায়তা দিত।

শেখ হাসিনা বলেন, তার ভেতরে এই যে একটা দরদি মন ছিল। হয়তো বেঁচে থাকলে এই দেশের জন্য অনেক কিছুই করতে পারতো। আজকে মাঝে মাঝে মনে হয় ৫৪ বছর বয়স পূর্ণ করেছে। এ বয়সে রাসেল কেমন হতো দেখতে? বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত চোখে থেমে যান প্রধানমন্ত্রী।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত