শিকলে বাঁধা রতন মিয়ার ২৫ বছর

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:০৮

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ২৫ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে রতন মিয়া নামে মানসিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তিকে। পায়ে শিকল বাঁধা থাকায় কক্ষ থেকে বের হতে পারেন না। একটি ছোট্ট অন্ধকার ঘরের মেঝেতে লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় চলছে তার খাওয়া, ঘুম, পেশাব-পায়খানা সবই।

রতন মিয়ার বয়স এখন ৫৫ বছর। বন্দী জীবন শুরু হয় ২৭ বছর বয়স থেকে। ২৮ বছর আগে মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যান। দুর্ঘটনার তিন বছর পর থেকে তাঁকে শিকলবন্দী করা হয়।

এলাকার লোকজন বলছেন, গ্রামের এক ব্যক্তি রতনের মাথায় আঘাত করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ব্যক্তির মাথায় পাল্টা আঘাত করতে গেলে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামে রতন মিয়ার বাড়ি। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রতন মিয়া তৃতীয়।

স্বজনরা জানান, ২৫ বছর আগে গরু ফসল নষ্ট করাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার এক ব্যক্তি তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর থেকেই তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসা না করিয়ে গোপনে ঘরের বারান্দায় একটি নির্জন আলো-বাতাসহীন কক্ষে শিকলে বেঁধে রাখেন তার এক মাত্র বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া। সেই থেকে চলছে তার বন্দি জীবন।

রতন মিয়ার বড় ভাই আঙুর মিয়া বলেন, স্থানীয়ভাবে রতনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে কয়েক দফা চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরে তাকে বাড়িতে আনার পর অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। বাড়ির বাইরে গেলে লোকজনের ওপর চড়াও হতেন এবং লোকজনকে মারতে শুরু করতেন। তাই বাধ্য হয়ে তাকে বাড়িতে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।

এদিকে রতনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার শিকলবন্দি রতনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হতে পারে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত