‘মামলাজট না কমালে বিচার বিভাগের উপর মানুষ আস্থা হারাবে’

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২০:৩৫

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘দেশের আদালতগুলোতে ৩১ বা ৩২ কিংবা ৩৩ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক মামলাজটের সংখ্যা। তাই এটিকে অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।’

আজ ২২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভনশন (জেআরসিপি) প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট বাংলাদেশ: ফলাফল উপস্থাপন ও আলোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জাস্টিস অডিটের তথ্যানুযায়ী দেশের শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষের বিচার বিভাগের উপর আস্থা আছে। আজকের যে ৩১ লাখ মামলারজট সেটা যদি ১০ বছর পর ৬২ লাখে দাঁড়ায় তাহলে কিন্তু এই ৮৭ ভাগ আস্থা কমে ৩৭ ভাগে নেমে আসবে। সেজন্যই মামলাজট কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে জাস্টিস অডিটের তথ্য এবং অভিজ্ঞ বিচারকদের পরামর্শকে কাজে লাগানো যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মামলাজট কমানোর লক্ষে সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। মাদক দ্রব্য আইন, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার অনন্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা পালনে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আনিসুল হক বলেন, ‘বহু আগে থেকে প্রবাদ চালু আছে জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড। আর আজকে এই নতুন মাত্রার মধ্যে আর একটা জিনিস যোগ করার প্রয়োজন রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে, জাস্টিস ডিলেইড শুধু জাস্টিস ডিনাইড না। এখন জাস্টিস যদি ডিনাইড হয়, জাস্টিস কিন্তু বসে থাকে না। স্ট্রিট জাস্টিস চলে আসে। আমরা কিন্ত সেটা চাই না। আমরা চাই জনগণ বিচার পাক।’

তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য যে বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয় তার সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে না। জনগণ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আইন-বিধি সংস্কারের পাশাপাশি নতুন নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সদা পরিবর্তনশীল বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি সদিচ্ছা, দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতার উপরে নির্ভর করে।’

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ যেখানে বিচারপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে তাদের জন্য আইনি পরামর্শ গ্রহণ এবং আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য। মামলার দীর্ঘসূত্রতা তাদের আইনি যাত্রাকে আরো কষ্টকর করে তোলে। আর তাই, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগোষ্ঠী সহ সকল বিচারপ্রার্থীর আইনি অধিকার নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন।’

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জার্মানির ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর বুর্কহার্ড দুকফে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন, জিআইজেড বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক এবং আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, জার্মান সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশের ‘রুল অব ল’ প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত, জাস্টিস রিফর্ম প্রকল্পের ম্যানেজার এ টি এম মোর্শেদ আলম প্রমুখ।

আইন মন্ত্রণালয় এবং জিআইজেড যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠানে সারা দেশের সকল জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক এবং মুখ্য বিচারিক হাকিম ও মহানগর হাকিমরা অংশ নেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত