খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভা

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১২:৫৯

বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে আছে ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে, তাঁর রাজনৈতিক সহচর রেডিওতে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন। খুনিদেরকে বললেন, ‘সূর্য সন্তান’। সেই সহচরের নাম খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য যোগ দেয় মোশতাকের মন্ত্রিসভায়।

খোঁজ করে জানা যায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় থাকা ২১ জন সদস্য যোগ দিয়েছিলেন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায়। মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হয়ে উপরাষ্ট্রপতি করেন মোহাম্মদউল্লাহকে। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী হন রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা। মাহবুব আলম চাষী হয়ে যায় মুখ্য সচিব।

মোশতাক মন্ত্রীসভা:

পররাষ্ট্র মন্ত্রী: বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
আইন মন্ত্রী: মনোরঞ্জন ধর
পরিকল্পনা মন্ত্রী: অধ্যাপক ইউসুফ আলী
অর্থ মন্ত্রী: আজিজুর রহমান মল্লিক
শিক্ষা মন্ত্রী: মোজাফফর আহমদ চৌধুরী
স্বাস্থ্য মন্ত্রী: আবদুল মান্নান
কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী: আবদুল মোমিন
এলজিআরডি মন্ত্রী: ফণিভূষণ মজুমদার
নৌপরিবহণমন্ত্রী: আসাদুজ্জামান খান
গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রী: সোহরাব হোসেন

প্রতিমন্ত্রী:

ডাক ও টেলিযোগাযো প্রতিমন্ত্রী: কে এম ওবায়দুর রহমান
ভূমি ও বিমান প্রতিমন্ত্রী: শাহ মোয়াজ্জেম চৌধুরী
রেল ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী: নুরুল ইসলাম মঞ্জুর
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: তাহেরউদ্দিন ঠাকুর
শিল্প প্রতিমন্ত্রী: নুরুল ইসলাম চৌধুরী
ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী: ক্ষিতিশ চন্দ্র মণ্ডল
পশু ও মৎস্য প্রতিমন্ত্রী: রিয়াজউদ্দিন আহমদ ভোলা মিয়া
যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী: সৈয়দ আলতাফ হোসেন

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মালেক উকিল মোশতাকের সংসদে স্পিকার হিসেবে শপথ নেন। মোশতাক সামরিক শাসন কায়েম করলেও জাতীয় সংসদ বহাল ছিল। স্পিকার ছিলেন আবদুল মালেক উকিল। স্পিকার হওয়ার আগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি স্পিকার হিসেবে বিদেশে স্পিকারদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর মোশতাকেরও আইনমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি কুখ্যাত ইনডেমনিটি নামক বিলটির রচয়িতা।

খন্দকার মোশতাক সরকারের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের পথ উন্মুক্ত করে দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। যিনি মোশতাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের আরেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহর স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রবর্তন হয়েছিল বাকশাল ব্যবস্থা। বাকশাল ব্যবস্থার অধীনে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে মোহাম্মদউল্লাহ মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন। ১৫ আগস্টের পর মোশতাকের উপরাষ্ট্রপতি হন মোহাম্মদউল্লাহ। পরে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। জিয়াউর রহমান হত্যার পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হলে উপরাষ্ট্রপতি করা হয় মোহাম্মদউল্লাহকে। মাত্র দুই দিনের মাথায় ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে বিএনপির শেষ দুর্গের পতন ঘটে।

মোশতাকের পতনের পর ফণিভূষণ মজুমদার, আবদুল মান্নান, আবদুল মোমিন, সোহরাব হোসেন, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, আবদুল মালেক উকিল, আসাদুজ্জামান খান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। মালেক উকিল আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসার আগ পর্যন্ত। অধ্যাপক ইউসুফ আলী মোশতাকের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি যোগ দেন জিয়ার মন্ত্রিসভায়। জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদেরও মন্ত্রী হন তিনি।

তথ্যসূত্র:
• বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস- অধ্যাপক আবু সাইদ
• মহাপুরুষ- এম আর আকতার মুকুল
• সাংবাদিক এবি সিদ্দিক এর ব্লগ
• জাসদের উত্থান ও পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি- মহিউদ্দীন আহমেদ

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত