মহেষখোলা সীমান্তনদী যেন ভারতীয় বাঁশ-গোলকাঠ চোরাচালানের ভাসমান ডিপো!

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০১৯, ১২:৪৬ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯, ১২:৫১

হাবিব সরোয়ার আজাদ

৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) বাংলাদেশ নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মহেষখোলা বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে বয়েচলা সীমান্ত নদী মহেষখোলার দু'তীর যেন সারি সারি ভারতীয় বাঁশ, চিপ, নলি, বেত ও গোলকাঠ চোরাচালানের ভাসমান ডিপোতে পরিণত হয়েছে।

দিবারাত্রী এ নদী পথকে চোরাচালানীরা চালা বাঁধা ভারতীয় গোলকাঠ, বাঁশ, চিপ, নলি, বেত চোরাচালানের নৌ রুট হিসাবে প্রকাশ্যে ব্যবহার করে আসলেও নদী তীরে থাকা মহেষখেলা বিজিবি ক্যাম্প ও মোহনপুর বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বশীলরা চোরাই মালামাল আটকে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে সীমান্তবাসী অভিযোগ তুলেছেন।

সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার একদল সংবদাকর্মী সরজমিনে শুক্রবার বিকেলে মহেষখোলা সীমান্ত নদী পথে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মধ্যনগরের মহেষখোলা শহীদ স্মৃতি সৌধে যাবারপথে তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে নদীর দু'তীরে চালা বাঁধা থাকা শতাধিক ভারতীয় বাঁশ, চিপ, নলি, বেত ও কয়েকটি গোলকাঠের চালার দৃশ্য।

স্থানীয় লোকজন জানান, নদীর পশ্চিম তীরেই রয়েছে নেত্রকোনা ৩১ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের কলমাকান্দা উপজেলার মহেষখোলা সীমান্ত ফাঁড়ি (বিজিবি ক্যাম্প)। অপরদিকে নদীর পূর্ব তীর থেকে মহেষখোলা বাজার অবধি পার্শ্ববর্তী মোহনপুর সীমান্তফাঁড়ি (বিজিবি) কতৃক নিয়ন্ত্রিত এলাকা।

তাদের অভিযোগ, মহেষখোলা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে দিবারাত্রী এলাকার চোরাচালানীরা প্রকাশ্যে ভারতীয় গোলকাঠ, বাঁশ, চিপ, নলি, বেত জাতীয় চোরাই মালামাল নৌরুট ব্যবহার করে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা এসব মালামাল নিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মধ্যনগরের থানা সদর, মহেষখোলা, দাতিয়াপাড়া, ধর্মপাশা সদরবাজার, নেত্রকোনার কলমাকান্দার বিশরপাশা ও কলমাকান্দা সদর বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার হাটবাজার ও করাত কলে।

শনিবার সন্ধায় নেত্রকোনা ৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটারিয়নের মহেষখলা বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার শহিদুল ইসলামের সাথে এ প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এসব বাঁশ, বেত. কাঠ বা চিপের চালানগুলো স্থানীয় এলাকা থেকে কিনে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান, আবার কোন কোন সময় চোরাই পথে ভারত থেকেও কিছু কিছু বাঁশ বেত, চিপ, কাঠ নিয়ে আসে সেগুলো আমরা মাঝে মাঝে আটকও করি। 

তিনি আরো বলেন, মহেষখেলা নদীটি আমাদের ব্যাটালিয়নের মোহনপুর বিজিবি ক্যাম্পের আওতাভুক্ত এলাকা। এরপর শনিবার রাত ১০টার ভেতর সব ধরনের বাঁশ, বেত, চিপ, কাঠ নদী থেকে সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেবেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান বিজিবির ওই ক্যাম্প কমান্ডার।

পরবর্তীতে সন্ধায় নেত্রকোনা ৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের মোহনপুর বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার সিরাজুল ইসলামের সাথে একই প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব বিষয় মোবাইল ফোনে কিছু বলা যাবেনা। একদিন ক্যাম্পে আসেন সাক্ষাতে আলাপ হবে। 

এরপর আবারো একই বিষয় অবহিত করলে তিনি বলেন মহেষখোলাবাজার ও নদীর পুর্বতীর আমার বিজিবি ক্যাম্পের আওতাভুক্ত এলাকা বলে স্বীকার করেন।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার মধ্যনগর থানার ওসি মো. সেলিম নেওয়াজের বক্তব্য জানতে চাইলৈ তিনি বলেন, সীমান্তের ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার এলাকা বিজিবির আওতাভুক্ত এলাকা তাই বাঁশ, কাঠ, বেত যাই সীমান্তের ওপার থেকে এপারে আসুক সেসব চোরাই মালামাল মহেষখোলা কিংবা মোহনপুর বিজিবি ক্যাম্পের লোকজন আটক করলে আমার থানাতেই মামলা করতে আসেন। এসব চোরাই মালামাল আটকের বিষয়টি থানা পুলিশের দায়িত্বে ভেতর পড়ে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখি বিজিবিকে বলব এসব বিষয়ে তৎপর হতে।

নেত্রকোনা ৩১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল শাহজাহান সিরাজের নিকট এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় কাঠ আসে বলে জানি এবং সেগুলো বিজিবি আটক করে কিন্তু বাঁশ, বেত বা চিপ ভারত থেকে চোরাই পথে আসে এ বিষয়টি আমার জানা নেই তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখব।