কাজিপুরে রিং বাঁধ ধসে বন্যায় প্লাবিত

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৯, ২২:০১

কাজিপুরে রিং বাঁধ ধসে বন্যায় প্লাবিত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধেঁয়ে আসছে বন্যা, ভাংছে বাঁধ, যুদ্ধকরেই বেচেঁ আছে বানভাসি মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে প্রবল স্রোতে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে জেলা পরিষদের বিকল্প রিং বাঁধের অন্তত ৬০ মিটার এলাকা ধসে মুহূর্তেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। এতে কাজীপুর-ধুনট সড়কের আধা কিলোমিটার এলাকা ডুবে গেছে। ধীরে ধীরে ধসের পরিধি বাড়তে থাকে এবং ১২ টার মধ্যেই প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। 

কড়ালগ্রাসী ভয়াল যমুনা নদী তীরবর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে উপজেলার পূর্বপাড় নাটুয়ারপাড়ায় যমুনা নদী তীরবতী স্থানে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত জয় বাধে ভাঙ্গন দেখা দিয়ে প্রায় পুরোটাই নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে , বাকি অংশ বালি ভর্তী জিও ব্যাগ ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। 

কাজীপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব সরকার জানান, ‘যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষায় উপজেলার মেঘাই, নতুন মেঘাই, পাইকড়তলী, কুনকুনিয়া ও পলাশপুর গ্রামের দেড় হাজার পরিবারকে রক্ষায় নির্মিত রিং বাঁধটির মেঘাই আটাপাড়া অংশে রাত ১১ পর থেকে ধস দেখা দেয়। দ্রুতই এ ধস বিস্তৃত হয়ে ৫টি গ্রাম মুহূর্তেই প্লাবিত হয়ে যায় এবং ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারের শিশু-বৃদ্ধ, গৃহপালিত পশুসহ বিভিন্ন জানমাল উদ্ধারে অভিযানে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন।’ 

কাজীপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার (এসও) ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছি। তবে পানির প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজে অনেক বেগ পেতে হয়।’ 

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, রাতে হঠাৎ করেই বাঁধটিতে ধস দেখা দেওয়ায় বাঁধের পাশের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দিদের জানমাল নিরাপদ সরিয়ে নিতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সারারাত জেগে কাজ করেন। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সহ অন্যান্য কর্মকর্তা দ্রুত ঘটনাস্থল ভাঙ্গন কবলিত স্থান রক্ষায় বালি ভর্তী ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাবে ভাঙ্গন কবলিত স্থানের পাণি রোধের চেষ্টা চালায়। 

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম পানি বৃদ্ধির তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘এখন বর্তমানে নদীর পাণি সামান্য দম ধরে থাকলেও আগামী ২/৩দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।’ 

কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজি জানান, ‘কাজিপুরের মাটি ও মানুষের প্রিয়নেতা মোহাম্মদ নাসিম এমপি নতুন মেঘাই এলাকায় নদীতীর রক্ষা বাধেঁ ভাঙ্গনের বিষয়টি অবগত হয়েছেন, তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন নির্দেশ দিয়েছেন, যে কোন উপায়ে ভাঙ্গন রোধ করতে হবে।’ 

এদিকে জেলা সদরের রানীগ্রাম এলাকার মানুষের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে, নতুন ওয়াবদা এলাকায় যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পাড়ে। জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধী পেয়েছে, বেলকুচির এনায়েতপুরের ব্রাম্মনগাতী, আড়কান্দি, হাটপাচিল এলাকার বেশকিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা।

এতে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির কারনে এসকল স্থানের অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকে বাড়িঘর নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে বাধের পাশে আশ্রয় নিচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারনে চরাঞ্চলে ফসলি জমিগুলো পানিতে ডুবে যাচ্ছে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত