দুর্নীতি দমন এবং দুর্নীতিবাজকে ধরিয়ে দিতে একজন নাগরিকের করণীয় কি কি

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৩:১৪ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৩:২৭

অনলাইন ডেস্ক

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই সোচ্চার সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ'র পুত্র সোহেল তাজ। এবারে তিনি তার ভেরিডাইড ফেসবুক পেইজে জানিয়েছেন কি ভাবে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করা যায়। পাঠকের জন্য আমরা সোহেল তাজের সেই লেখা অবিকল তুলে ধরলাম।

আজ থেকে ৪৮ বছর আগে এই বাংলার মানুষ একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিরিশ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আর সেই স্বপ্ন ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। এমন একটি দেশ যেখানে সকল মানুষের থাকবে সমান অধিকার- মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে-গরিব-ধনি, নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার। সেই স্বপ্নের দেশে থাকবে ন্যায় বিচার ও এমন সমাজ ব্যাবস্থা যেখানে সকল নাগরিক সমান সুযোগ পাবে তার যোগ্যতা অনুযায়ী। এমন একটি সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ যেখানে সবার জন্য থাকবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বাসস্থানের ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা, এমন একটি সোনার দেশ যেখানে চিকিৎসার অভাবে কেউ মারা যাবে না। কত সুন্দর এই সোনার বাংলার স্বপ্ন, তাই না?

আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই কাংক্ষিত লক্ষ্যের দিকে, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একটি সম্মৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গোড়ার লক্ষ্যে। এই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ও আরো গতিশীল করতে আমাদের সকলের কিছু না কিছু করণীয় আছে।

একটি সুস্থ সবল মানুষের জীবন ও স্বপ্ন যেমন কেড়ে নিতে পারে ক্যান্সারের মত একটি ব্যাধি, ঠিক তেমনি একটি জাতির প্রাণ ও স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করতে পারে আরেকধরেনের ক্যান্সার যার ওপর নাম দুর্নীতি। আজ আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এই দুর্নীতি নামক ক্যান্সার।

আমরা জানি বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে অনেক পদ্দক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে। এবং এর নমুনা আমরা দেখেছি কিছু হাই প্রোফাইল ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে যা সকল সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে।

তাই আজকে আমাদের সকলের দায়িত্ব সরকারকে এই মহতী উদ্দ্যোগে সহায়তা করা কেননা আমরা সবাই কিন্তু কোন না কোন ভাবে এর জন্য দায়ী। আমি আপনি সবাই এর সাথে জড়িত কারণ আমরা নিজেরা সরাসরি না করলেও আমরা এর সাক্ষী। বললে ভুল হবেনা যে আমরা কাউকে না কাউকে চিনি যে চোখের সামনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে কিন্তূ আমরা শুধু চুপে চুপে আলাপ সমালোচনা করছি, কোন ব্যবস্থা নেই নাই। এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন, কি আর ব্যবস্থা নিবো, আমাদের কথা কেউ কি শুনবে ? হ্যা, শুনবে আমরা যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় সহায়তার হাত বাড়াই।

সর্বপ্রথেম আমাদের বুজতে হবে দুর্নীতি কি, এর সংজ্ঞা জানতে হবে:
দুর্নীতি (ইংরেজি: Corruption) দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিকে নির্দেশ করে। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান, সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারী ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত।

দুর্নীতির সংজ্ঞায় আমরা বুজলাম এখন এর আলামত কি ভাবে চিহ্নিত করতে হয় সেই দিকে দৃষ্টি দেই। ধরেন, কোন এক গ্রামের ছেলে যার বাবা হয়তো ১০ বছর আগে একটা ছোট্ট কাঠের স' মিল চালিয়ে কোন মতে পরিবার চালাতো আর আজ,

(দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করার তালিকা)

১। হঠাৎ তাদের ৩-৪ কোটি টাকার ৩ তালা পাকা বাড়ি 
২। বড় ভাই কোন ৫-৬ কোটি টাকার ইট খোলার মালিক
৩। পেট্রল/সিএনজি ফিলিং স্টেশন প্রক্রিয়াধীন
৪। গ্রামের স্কুলে শত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ৩-৪ কোটি টাকা ব্যয় করে অনুষ্ঠান
৫। টিভি চ্যানেলের মালিক/অংশীদার
৬। ঢাকা শহরে নামে বেনামে একাধিক রেস্তরাঁ 
৭। নামে বেনামে একাধিক ফ্লাট/এপার্টমেন্ট 
৮। আমেরিকা বা ইউরোপে মিলিয়ন ডলার বাড়ি
৯। ২-৩ গাড়ি একত্রে যার মূল্য ৩ কোটি টাকার উপরে
১০। ......

এখন এইসব দেখে আপনি বলছেন, আরে এইটা তো আমাদের গ্রামের রোকনের কাহিনী এবং ওকে নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনাও করেছেন বন্ধু বান্ধব আর পরিবারের সাথে কিন্তু এ নিয়ে আর কিছু করেন নাই কারণ কিছু যে করার আছে সেটা হয়ত আপনি জানেনও না। এই ধরণের দুর্নীতিবাজরাই সমাজের রন্ধে রন্ধে ঢুকে সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে-নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত আর মিস গাইড করছে।

এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং যথাযথ কতৃপক্ষকে জানাতে হবে। সাধারণত এদের আয় (ইনকাম) এর সাথে ব্যয় আর সম্পত্তির মিল থাকে না। আর এসব যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব হচ্ছে এনআরবি (ন্যাশনাল রেভিনিউ বোর্ড) এর এবং পরবর্তীতে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করার দায়িত্বটি দুর্নীতি দমন কমিশনের।

একজন নাগরিক তাহলে কি প্রক্রিয়াতে অভিযোগ করতে পারে কোন সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে? এই বিষয়ই আমি আগামী তে জানতে চাইবো এনআরবি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে-হয়ত ফেইসবুক লাইভ এর মাধ্যমে।