রিফাত হত্যা: প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০১৯, ১২:০৬

সাহস ডেস্ক

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (০২ জুলাই) ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোর সোয়া চারটার দিকে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের ওপর গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়।

গোলাগুলির পর ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শটগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন ও বরগুনা সদর থানায় কর্মরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাবিবুর রহমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি দুজনকে বরগুনা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা এলাকায় অবস্থান করছে। তারা পুরাকাটা সংলগ্ন পায়রা নদী দিয়ে ট্রলার যোগে বরগুনা সদর উপজেলা ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বরগুনার পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশ্রাফ উল্যাহ তাহেরের নেতৃত্বে ভোর ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে পুরাকাটার ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নয়ন বন্ড তার ৫-৭ জন সহযোগীকে নিয়ে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পরে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।

তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষের গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণকারীরা পিছু হটলে পুরাকাটা এলাকার মজিদ মিলিটারীর বাড়ির পূর্বপাশে পায়রা নদীর বেড়ি বাঁধের পাশে তল্লালি চলাকালে গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। এদিকে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের বলে শনাক্ত করেন তারা।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। এ সময় বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি তার স্বামীকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাকে (রিফাত) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। 

পরে ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়। জনবহুল এলাকায় এমন নৃশংস হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে দেশেজুড়ে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের ঝড় ওঠে।

২৭ জুন সকালে নিহত রিফাতের বাবা বরগুনা সদরের বড় লবণগোলার বাসিন্দা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বরগুনা শহরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এবং তার সহযোগী রিফাত ফরাজী ও তার ছোট ভাই রিশান ফরাজীসহ ১২ জনকে আসামি এবং আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এ মামলায় সোমবার পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চন্দন (২১), মো. হাসান (১৯), অলিউল্লাহ (২২) টিকটক হৃদয় (২১) এজাহারভুক্ত আসামি। 

ঘটনার পরের দিন সকালে চন্দনকে, সন্ধ্যার মো. হাসান গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার বরগুনা থেকে অলিউল্লাহকে (২২) এবং ঢাকা থেকে টিকটক হৃদয়কে (২১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্য পাঁচজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন নাজমুল ইসলাম (১৮), সাগর (১৯), তানভীর (২২), কামরুল হাসান ওরফে সাইমুন (২১)। অপর একজনের নাম পুলিশ প্রকাশ করেনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত