কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গির একজন আ.লীগ নেতার ছেলে

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০১৬, ১৪:৩১

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর কল্যাণপুরে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ‘জঙ্গি আস্তানা’য় পুলিশের অভিযানে নিহত ৯ ‘জঙ্গি’র মধ্যে একজন চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে বলে জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশের পর তা দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন ওই নেতার পরিবারের সদস্যরা।

ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আজিজুল হক চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুংছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর্মরত আছেন। ৯ জনের মধ্যে আজিজুল হক চৌধুরীর ছেলে সাব্বিরুল হক কনিককে শনাক্ত করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। প্রকাশিত ছবির তৃতীয় সারির মাঝখানের ব্যক্তিকেই সাব্বির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) এমরান হোসাইন বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এখন পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এ বিষয়ে সব তথ্য নিশ্চিত হয়ে শিগগিরই সাংবাদিকদের জানাতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন এমরান হোসাইন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সাব্বির গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসির পর চকবাজারে জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করতে গিয়ে হঠাৎ করে তার কথাবার্তা, চালচলনে পরিবর্তন দেখা দেয়। পরে সে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসির) ইকনোমিক অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ক্যাম্পাসের আবাসিক হোস্টেলে থাকত সাব্বির।

একসময় তিনি বলতে থাকেন, তিনি ছাড়া স্বজন-শুভার্থী কারো ধর্মকর্ম শুদ্ধ নয়। অনৈতিক, অনৈসলামিক বলেও কাছের লোকদের গালি দিতেন। জানা যায়, তাবলিগের কথা বলে মাঝে মাঝে সপ্তাহ-দশদিনের জন্য উধাও হয়ে যেতেন। বছরখানেক আগে একবার তিন মাসের জন্য নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে আসেন।

সর্বশেষ চার মাস আগে রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে বের হন। সেই থেকে কণিক নিখোঁজ। দীর্ঘদিন কোনো খোঁজ না থাকায় সন্তানের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা। সন্তান নিজে বিপথগামী হয়েছেন বুঝতে পেরে নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি করারও প্রয়োজন মনে করেননি তারা।

সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ নামে ফেইসবুকের একটি ভুয়া আইডি থেকে তার কিছু তৎপরতা স্বজনদের কাছে ধরা পড়ে। ওই আইডি থেকে জানান, তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্ত কোথায় আছেন, কেমন আছেন কিছুই বলেননি।

২০০৮ সালে ‘আমাগো সাব্বির দা’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি খোলে ব্যবহার করে। গত দু’বছর ধরে সেটি ইনএকটিভ করে রাখে। সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ থেকে তার তৎপরতা দেখা যায়। এই আইডিটি ছিল কোরআন-হাদিসের আলোকে নানা স্ট্যাটাসে ভরা। সর্বশেষ এটির ব্যবহার হয়েছিল ২০১৪ সালে। এই আইডিতে অস্ত্র তাক করা এক জঙ্গির ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে। আছে পোশাকধারী কিছু মানুষের লাশ বহন করা এবং উটের দৌড়ের ছবি।