কমলার খোসার মতো উঠে যাচ্ছে ৩০ কোটির কার্পেটিং

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০১৯, ১২:১৭

বরিশালের আগৈগঝাড়া সদর থেকে বাশাইল হয়ে গৌরনদীর ঘোষেরহাট পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। নির্মিত সড়কে ঢালাইয়ের একদিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। প্রতিবাদে স্থানীয় জনতা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে বাশাইল হয়ে গৌরনদীর ঘোষেরহাট পর্যন্ত দুটি কালভার্টসহ ১৮ ফুট প্রশস্তের ১২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ পান এমএম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সওজ বিভাগের একই কার্যাদেশে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে আরও প্রায় ৫৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সুধীর রঞ্জন ও ইউপি সদস্য কাওসার আহম্মেদসহ কয়েকজন বাসিন্দারা জানান, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই গ্রামের সুধীর মেম্বারের বাড়ির সামনের ব্রিজ থেকে বাকাই গ্রামের ফিরোজার মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে সড়কের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে। 

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢালাইয়ের একদিনের মধ্যেই বিভিন্নস্থানের কার্পেটিং উঠে গেছে। এছাড়া সড়কের কার্পেটিং হাত দিয়েই টেনে তুলছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, সড়ক নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট শামসুল হকের উপস্থিতিতে বুধবার রাস্তার কার্পেটিং করা হয়। ওইসময় স্থানীয়রা তাকে ভাল করে প্রাইম করে কার্পেটিং ও সিলকোড করার অনুরোধ করেও কোন সুফল পাননি। সড়ক কার্পেটিং করার একদিনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে বেশ কয়েকটি স্থানের কার্পেটিং উঠে যায়।

স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার জানান, সিডিউল অসুযায়ী এলএ-৩৫ গ্রেডের পাথর ও সিলেটস্যান্ড বালু সমপরিমান মিশ্রন করে ম্যাকাডাম দিয়ে ঠিকাদারের সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। ম্যাকাডম শেষে লুচ পাথরে ঢেকে সিলেটস্যান্ড বালু দিয়ে কমপ্যাকশন করে প্রাইম করার কথা। প্রাইম শেষে পুনরায় সিলেটস্যান্ড বালু দিয়ে ঢেকে দিয়ে তা পরিস্কার করে ৪০ মিলিমিটার কার্পেটিং শেষে ১০ মিলিমিটার সিলকোড করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন সড়ক বিভাগের কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে তাদের উপস্থিতিতে সড়কে শুধু ৩-৪ ইঞ্চি লোকাল বালু ও তার ওপর কিছু মরা পাথর দিয়ে ম্যাকাডামের কাজ করেছে। সেই ম্যাকাডামে পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়াও ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে ম্যাকাডাম করে তার ওপর লোকাল বালু দিয়ে নামকাওয়াস্তে প্রাইম করে তার ওপর আবার লোকাল বালু ছিটিয়ে কমপ্যাকশন ও পরিস্কার না করেই কার্পেটিং করায় ঢালাই স্থায়ী হয়নি।

তারা আরও জানান, মাগুরা থেকে ঘোষেরহাট পর্যন্ত সড়কের সব জায়গাই একই অবস্থা। সিডিউল অনুযায়ী নির্মিত সড়কের কোথাও সিলকোড করা হয়নি। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাইডওয়াল দিয়ে পাইলিং করার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে বাঁশ ও ড্রামসিট দিয়ে পাইলিং করা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার মাহফুজ খান সাংবাদিকদের বলেন, লেবাররা সাইট চুক্তিতে কাজ করে। সাইট বুঝিয়ে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়। প্রতিষ্ঠানের সুনাম দুর্নাম নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা ভুল করলেও তিনি নিজে প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করে কাজের মান খারাপ হলে পুনরায় প্রাইম করে নতুন করে কাজ করবেন বলেও জানান। 

কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বরিশাল সওজ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ মিয়া জানান, কাজ নিয়ে সমস্যার কথা তিনি শুনেছেন। জুন মাসে ব্যস্ততার জন্য প্রতিদিন তিনি সাইটে যেতে পারছেন না।

বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। কাজের কোয়ালিটির ব্যাপারে কোন আপোষ করা হবে না। কাজ খারাপ হলে ঠিকাদারকে পুনরায় কাজ করতে হবে। সময় সুযোগ করে তিনি দ্রুত সাইট পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত