নিজের মাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চান ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ!

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৯, ১৯:৩০

অনলাইন ডেস্ক

পৈত্রিক বাড়ি দখলের জন্য নিজের মাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার ‘হুমকি দিতেন’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। এমনকি নিজের গানম্যান দিয়ে মাকে ভয়ও দেখিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে আইন, বিচার, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন নাহার তসনিম।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের গর্ভধারিণী মা অভিযোগ করেছেন, মেয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এরপর ৬০ শতাংশ অকেজো কিডনি নিয়ে এখন তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। উত্তরার নিজ বাড়িতে ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তুরিনের মা।

লিখিত বক্তব্যে সামসুন নাহার তসলিম বলেন, ‘আজ দুইবছর তিন মাস উনিশ দিন আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার আঠার দিন পরে তুরিন আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের প্রতিবাদ করা।’

মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তুরিন আফরোজের মা বলেন, ‘আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার, ওষুধ খরচ চলত। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর তুরিন বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে তুলে নেয়। অপরিচিত লোকদের নিয়ে রাত-বিরাতে ঘরে ঢোকে। দারোয়ান-ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে তার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া লাগত। এ সব বিষয়ে নিষেধ করলে ডিজিএফআই, র‌্যাব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে আমাদের ভয় দেখাত। বলত ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনোকিছু করলে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করার ভয় দেখাত।’

সামসুন নাহার তসলিম বলেন, ‘আমি তো আইনের ধারা বুঝি না। তুরিন আরও বলত, পৃথিবীর যেখানেই থাকো ধরে নিয়ে আসব। আর তার গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাত। আমি গ্রামের বাড়ি নীলফামারী যেতে পারি না। সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে গ্রামের বাড়ির জমিজমা ও বাড়ি কুক্ষিগত করেছে। প্রতিবাদ করলে বড় আপু (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও ছোট আপুর (প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা) প্রসঙ্গ টানত।’

তুরিনের মা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তিনি তো একজন মা। আমরা জানি, উনি অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেন না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই। আমার শরীর ভীষণ খারাপ। কিডনির ৬৫ শতাংশ অকেজো। ডায়াবেটিকস আছে। ওষুধ কেনার পয়সা বাড়িভাড়া থেকে পেতাম সেটাও তুরিন আফরোজ কেড়ে নিয়েছে। দেশে থাকার জায়গা নেই এখানে.. সেখানে থেকে বেড়াই।’

তুরিনের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির বলেন, ক্ষমতার দাপটে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার (বিধবা) মাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি করে আসছে। তার কারণ একটি আর তা হলো, দেশে আমাদের সম্পদ কুক্ষীগত করা। চক্ষু লজ্জায় এতদিন বিষয়টি আড়াল করে রেখেছি। আমি ও আমার অভাগিনী মা ক্ষমতাসীন কাউকে অবমাননা করতে চাইনি। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমার বাসা থেকে আমাদের বের করে দেওয়ার পরও রাজউক কর্তৃক কর ও ভূমি কর আমি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমার অনুপস্থিতিতে নিজ স্বার্থ কাজে লাগিয়ে তুরিন আফরোজ ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে সংবিধানবহির্ভূত কাজে বাধ্য করে আমাদের মা-ছেলের ক্ষতি করছে। ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকাতেই নয় নীলফামারীতেও আমাদের চাচাতো ভাই ও বোনদের জমিজমা জিম্মি করে রেখেছে।

তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবি জানান তিনি।

নিজের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মা শামসুন নাহার তসলিম ও ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।

এর আগেও ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (জিডি নম্বর- ১১৮৮) করেছিলেন তার মা। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।