রপ্তানিমুখী খাতে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান

প্রকাশ : ২৯ মে ২০১৯, ১২:৫৯

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য দেখতে চাই। এক্ষেত্রে জাপারি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে রপ্তানি কেন্দ্রিক খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান জানাই।

বুধবার (২৯ মে) সকালে টোকিওতে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার চমৎকার দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে সকল সম্ভবনা কাজে লাগানোর আমন্ত্রণ জানাই।

বিদেশি বিনিয়োগে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম উদার রাষ্ট্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, উদার ট্যাক্স পলিসি, মেশিনারি আমদানিতে কর রেয়াত সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। শতভাগ বিদেশি মালিকানা, লভ্যাংশ এবং মূলধনের পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা এবং জাপানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রবেশাধিকারের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যয়, মানব সম্পদ, বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ইত্যাদির বিচারে বাংলাদেশ দ্রুত উদীয়মান আকর্ষণীয় বিনিয়োগস্থল। গেল বছর জাপান টোবাকোর বাংলাদেশ ১.৪ বিলিয়ন বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এ রকম আরও বিনিয়োগ দেখতে চাই।

এশিয়ায় জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

জাপান-বাংলাদেশ দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহু জাপানি কোম্পানি এ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যবসা করছে। জিডিপি ৮ দশমিক ১৩ অর্জনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ডাবল ডিজিট জিডিপি অর্জন করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি বেসরকারি খাত-এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি উদ্যোক্তা তৈরিতে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে, এটা দেশি বা বিদেশি হতে পারে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আড়াই হাজারে জাপানের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিদির্ষ্ট করা আছে। সরকার টু সরকার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে প্রচুর জায়গা নেওয়া হয়েছে।

আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কের কাজ চলছে এবং আরো ২৬টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণাধীন। বাংলাদেশের ৮০০ আইটি কোম্পানির মধ্যে দেড়’শ কোম্পানি বিদেশি গ্রাহকদের বিশেষ আইটি সেবা দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল, সিসকোসহ স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশের ২০ হাজার আইটি বিশেষজ্ঞ কাজ করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক সুনামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তৈরি-পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

ওষুধ শিল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত ওষুধে উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বড় একটা প্রাণকেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ ১০০টির বেশি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের নজর কেড়েছে। ইউরোপসহ ১৪টি দেশে বাংলাদেশ যাত্রী ও কার্গো জাহাজ সরবরাহ করছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানের অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক জাপান-বাংলাদেশ যৌথ কমিটির (জেবিসিসিইসি) তেরুয়া আসাদা, জাইকার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজুহিকো কোশিকাওয়া, জিত্রো প্রেসিডেন্ট ইসুশি আকাহোশি, সুমিতমো করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসায়ুকি হাইদো, মিৎসুই অ্যান্ড কো লিমিটেডের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনসুকি ফুজি, সজিতজ করপোরেশনের সিনিয়র ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়তারো হিরাই, মিৎসুবিশি মটরসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ুজিরো কোবাশি, হোন্ডা মটরসের ব্যববস্থাপনা কর্মকর্তা নোরিয়াকি আবে, মারোহিসা কো লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট কিমিনবু হিরাইসি প্রমুখ।

আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জাপানের ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের নীতিরও প্রশংসা করেন তারা।

দেশটির ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন জাপানের অন্যতম বিনিয়োগ গন্তব্য। বর্তমানে ২৮০টির মতো জাপানি কোম্পানির বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগে আছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত