সিকিউরিটি গার্ড শামীম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১৪:১৩

সাহস ডেস্ক

বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ডিউটিরত সিকিউরিটি গার্ড মোঃ শামীম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম- মোঃ কফিল। ১৫ মে, ২০১৯ তারিখ কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানার পূর্বধনিরাম গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার কাজে ব্যবহৃত আলামত আসামীর নিজ বাড়ি থেকে ও অবশিষ্ট আলামত ভাটারা থানাধীন নয়ানগর মুন্সীবাড়ি তার মেস উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম মোঃ শামীম ভাটারা থানাধীন ২৬, প্রগতি স্বরনী ব্লক-জে, বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথ-এ প্রহরী হিসাবে চাকুরী করত। শামীম প্রত্যেক দিনের ন্যায় ২০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ রাত্র ১০টায় হতে ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ সকাল পর্যন্ত উক্ত এটিএম বুথে ডিউটি করছিল। ২১/০১/২০১৯ তারিখ সকাল ৭টায় শামীমের বাবা বাদী নজরুল ইসলাম লোক মারফত জানতে পারেন, তার ছেলে শামীমকে অজ্ঞাতনামা কে বা কাহারা যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথ-এর ভিতরে মাথাসহ মুখ মন্ডলে শক্ত লোহার রড বা হাতুরী দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছে। এ ঘটনায় ঐদিনেই শামীমের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

হত্যা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই উপর দায়িত্ব বর্তায়। মামলাটি তদন্তকালে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, গুপ্তচর নিয়োগ ও ঘটনাস্থলের এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে মোঃ কফিলকে হত্যাকারী হিসেবে সনাক্ত করা হয়। হত্যাকারী মোঃ কফিল এলিট ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানীতে গার্ড হিসেবে ভিকটিম শামীমের সাথে কর্মরত ছিল। হত্যার দিন শামীম বারিধারা জে-ব্লকের যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ও মোঃ কফিল একই ব্লকে ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথে রাত্রীকালিন ডিউটি করছিল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোঃ কফিল ও শামীম সম্পর্কে প্রতিবেশী ভাই। শামীম এলিট ফোর্সে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে কফিলকে ঢাকা নিয়ে আসে এবং চাকুরী দেয়। কফিল ঢাকা এসে ভিকটিম শামীমের বাসায় একমাস থাকে। শামীমের বাবা-মা কফিলকে বাসায় থাকতে নিষেধ করলে সে বাসা ছেড়ে চলে যায়। পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকালে সাবিনা নামের এক মহিলার সাথে পরিচয় হওয়ার বেশ কিছুদিন পর কফিলকে সাবিনা তার বোনকে বিয়ের করার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে কফিল রাজী হয়ে বিয়ে ঠিক করলে এক পর্যায়ে সাবিনার স্বামী কফিলের নিজ গ্রামের ঘর-বাড়ী দেখতে ও কফিল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে যায়। কফিল সম্পর্কে ভালো কিছু না পেয়ে সাবিনা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আর এই বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পেছনে কফিল মনে করতো শামীমের হাত রয়েছে। বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া, কফিলের ব্যক্তিগত কথা সিকিউরিটি কোম্পানির জোন কমান্ডার শাহীনকে বলে দেওয়া এবং ধারকৃত ২ হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ায় কফিল ভিকটিম শামীমের উপর ভীষনভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার ২/৩ দিন আগে কফিল ভাটারা থানাধীন নতুন বাজার থেকে হত্যার করার জন্য হাতুড়ী, সাদা প্যান্ট, সোয়েটার(জ্যাকেট) এবং মুখোশ কিনে একটি ব্যাগের ভিতরে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার দিন ২০/০১/২০১৯ ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথ এর ছাদ থেকে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক রাখা ব্যাগটি নিয়ে কিছুদুর সামনে গিয়ে পোষাক পরিবর্তন করে কফিল। পোষাক পরিবর্তন করার পর ব্যাগটি পুনরায় পূর্বে জায়গা অর্থাৎ ইউসিবি বুথের ছাদে রেখে দেয়।

ব্যাগ রাখার পর কফিল বারিধারার জে-ব্লকের ভিকটিম শামীমের যমুনা ব্যাংকের বুথে যায়। গিয়ে দেখে শামীম চাদর মুড়িয়ে শুয়ে আছে। এরপর কফিল পকেট থেকে হাতুড়ি বের করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমিয়ে থাকা ভিকটিম শামীমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পাঁচটি গুরুতর আঘাত করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর কফিল যমুনা ব্যাংকের ভিতরের ক্যামেরে ভেঙ্গে যুমুনা ব্যাংকের বুথ থেকে বের হয়ে যায়। এরপর অন্য রাস্তা দিয়ে কফিল তার ডিউটিরত পোস্ট ইউসিবি বুথের ছাদ থেকে ব্যাগটি নিয়ে খুনে পরিহিত পোষাক পরিবর্তন করে এলিট ফোর্সর পোষাক পড়ে এবং খুনে ব্যবহৃত পোষাক, মুখোশ ও হাতুড়ী তার ব্যাগের ভিতর রাখে। এরপর ব্যাগটি নিয়ে বাসায় চলে যায় এবং তার মেস রুমে ঢুকে ব্যাগটি রেখে দেয়। পরবর্তীতে কফিল ভিকটিম এর আত্মীয়-স্বজনের সাথে স্বাভাবিক আচরন করে এবং ভিকটিমের লাশ ঢাকা হতে কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া,দাফন করা সহ যাবতীয় কাজে ভিকটিমের পরিবারকে সহযোগিতা করে। উক্ত হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার পর আসামী কফিল এলিট ফোর্সের চাকুরী ছেড়ে দেয় এমনকি বকেয়া বেতন ও বোনাসের টাকা নেওয়ার জন্য পর্যন্ত ঢাকা আসেনি।

১৭/০৫/২০১৯ তারিখ মোঃ কফিলকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে কফিল ভিকটিম শামীমকে হত্যায় নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত