নৌকা ডুবে ভূমধ্যসাগরে ৩৭ বাংলাদেশির মৃত্যু

প্রকাশ : ১২ মে ২০১৯, ১১:৩৬

সাহস ডেস্ক

অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে প্রায় ৬০ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি। লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে।  তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট গতকাল শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ৩৭।

উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের তথ্য অনুযায়ী, ইতালি অভিমুখী নৌকাটিতে ৫১ জন বাংলাদেশি ও তিনজন মিসরীয় ছাড়াও মরক্কো ও চাদের কয়েকজন ছিলেন। বাকিরা ছিলেন আফ্রিকান। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একটি শিশুসহ মোট ১৪ জন বাংলাদেশি রয়েছে। সেই হিসাবে নৌকাডুবিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৭ বাংলাদেশির।

নৌকাডুবির পর উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জুয়ারা উপকূল থেকে একটি বড় নৌকা ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। গভীর রাতে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার জলসীমায় ওই বড় নৌকা থেকে প্রায় ৭৫ জনকে ছোট একটি নৌকায় নামানো হয়। ওই ছোট নৌকাটি পরে ডুবে যায়।

তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জারজিসে রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মোনজি স্লিম বলেন, ওই অভিবাসীদের বাতাসভর্তি ছোট একটি নৌকায় গাদাগাদি করে তোলার ১০ মিনিটের মধ্যে সেটি ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে জারজিসের উপকূলে নিয়ে আসে।

উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানিয়েছে যে নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর থেকে তারা প্রায় আট ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানিতে ভেসেছে। জেলেরা তাদের অবস্থান বুঝতে পেরে তিউনিসিয়ার কোস্ট গার্ডকে খবর দেয়।

এদিকে তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তিনজনের মরদেহ গত শুক্রবার উদ্ধার করা হয়েছে।

মোনজি স্লিম বলেন, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের যদি তিউনিসিয়ার জেলেরা না দেখত তাহলে হয়তো তারা সাগরে ডুবেই মারা যেত। আর নৌকাডুবির বিষয়টি হয়তো কেউ জানতেই পারত না।

ভূমধ্যসাগর পথে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধারে দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জাহাজ কাজ করে। তবে ইতালির সরকার এ ধরনের অভিযানের সমালোচনা করায় ওই জাহাজগুলোর তৎপরতাও কমে এসেছে।

ইতালির কট্টর ডানপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও স্যালভিনি ‘ক্লোড পোর্টস’ (বন্দর বন্ধ) নীতি অনুসরণ করছেন। তিনি সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া কোনো অভিবাসীকে তাঁর দেশে ঢুকতে দেবেন না বলে আগেই ঘোষণা করেছেন। তবে লিবিয়া থেকে যাত্রা করা দুটি নৌকা সমস্যায় পড়ায় গত শুক্রবার ৬০ জনেরও বেশি অভিবাসী ইতালিতে অবতরণ করার সুযোগ পেয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা ক্রমেই প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। চলতি বছরের তিন মাসে লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন—এমন অভিবাসীদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সেখান থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লিবীয় ও অন্যান্য দেশের বাসিন্দা সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য ভূমধ্যসাগরকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত ১৭ হাজার অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছে। এই যাত্রাপথে প্রায় ৫০০ অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানো অভিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত