আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ মাদক: ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশ : ০৭ মে ২০১৯, ১৭:৪৬

সাহস ডেস্ক

মাদকাসক্তি ব্যক্তি নিজের সাথে পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করছে। এই মাদকের ফলে আমাদের ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হলে দেশের উন্নয়নের কিছুই থাকবে না। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে তথ্য দিন, পুলিশ আপনাদের পাশে আছে।

আজ ৭ মে, ২০১৯ উত্তরা ৬ নং সেক্টরে উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগ।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনসাধারণের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে কমিশনার বলেন, আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ও উদ্দীপনায় আজকে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। আপনাদের সহযোগিতার কারণে ঢাকা শহরে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মত অপরাধ নেই বললেই চলে। তবে একেবারেই ক্রাইম ফ্রি সমাজ চিন্তা করা যায় না। কেউ অপরাধ করলে আমরা দ্রুত সময়ে তাদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করছি। জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি থেকে শুরু করে হলি আর্টিসান হামলা ছিল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা সকল ষড়যন্ত্র জীবনবাজি রেখে প্রতিহত করেছি। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বে অনুকরণীয়। আমাদের গোয়েন্দাদের কঠোর নজরদারির কারণে হলি আর্টিসানের পর বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাসী হামলা হয়নি। আমাদের গোয়েন্দারা ও কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে দায়িত্ব পালন করি। মানুষের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ পুলিশের অনেক বড় ত্যাগ রয়েছে। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মত্যাগের মাধ্যমে অনেক সন্ত্রাসী হামলা থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছি। যেমন হলি আর্টিসান ও শোলাকিয়া ঈদের জামাতে হামলার ঘটনা।

কমিশনার আরো বলেন, টেকশই উন্নয়নের জন্য চাই টেকশই নিরাপত্তা। কয়েক বছর আগেও সবখানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে কল্পনা করা যেত না আর এখন নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় প্রতিটি জায়গায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। যার ফলে অপরাধীকে স্বল্পসময়ে সনাক্ত করে গ্রেফতার করা সহজ হচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে আপনাদের সচেতন করতে  আমরা হাজার হাজার উঠান বৈঠক করেছি, ‍সিটিজেন ইনফর্মেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের প্রায় ৬৫ লক্ষ নাগরিকের তথ্যের সমন্বয়ে তথ্য ভান্ডারে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে অপরাধের হার কমেছে এবং কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।

মাদকের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে কমিশনার বলেন, বর্তমানে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ মাদক। আমরা চাইনা ঐশীর মত আর কোন ঐশী আমাদের সমাজে তৈরি হোক। মাদক সম্পর্কিত তথ্য পুলিশকে দিন। তথ্য দাতার নাম কোন অবস্থায় প্রকাশ করা হবে না। তথ্য দাতার নাম প্রকাশ করা মাদক ব্যবসায়ীকে সহযোগিতা করার অংশ। পুলিশের কোন সদস্য মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীর সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তাকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে, কোন ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি আরো বলেন, সন্তান মাদকাসক্ত বা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে কি না তা প্রথমত বাবা-মার দেখার দরকার, এরপর নজরদারিতে রাখার দরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এমন কিছু দেখলে পুলিশকে জানান। আমরা কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে তাকে সুপথে আনার চেষ্ঠা করব। সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতা ছাড়া শুধু আইন প্রয়োগ করে মাদক ও সন্ত্রাস দমন করা যাবে না। আপনারা পুলিশকে পজিটিভলি দেখেন। আমাদের থানা পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। থানা থেকে ভূক্তভোগীকে সর্বোচ্চ আইনী সাহায্য করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। থানায় এসে যাতে কেউ হয়রানি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে।

পবিত্র রমজানে রোজাদার নগরবাসীকে ইফতারের আগে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে প্রতিদিন দুই হাজার ট্রাফিক পুলিশ শুধু খেজুর ও পানি খেয়ে ইফতার করে। আমরা রমজান ও ঈদে বাস-টার্মিনাল, শপিং মলে নিরাপত্তা দিবো। যাতে নিরাপদে নগরবাসী ঈদ কেনাকাটা করতে পারে।

আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় আগত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সম্মানিত নগরবাসী নিজ এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো ভালো রাখতে ডিএমপি কমিশনারে নিকট কিছু পরামর্শ ও দাবী উত্থাপন করেন। এসময় কমিশনার নগরবাসীর উত্থাপিত দাবী ও পরামর্শগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং তা বাস্তবায়নে আশস্ত করে সংশ্লিষ্ঠ থানা ও পুলিশ অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন।

এ সময় উক্ত মতবিনিময় সভায় ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বিপিএম (বার), স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিনিধি, সেক্টর কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিসহ ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত