বাংলাদেশ বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩০ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১১:১০

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যয়, মানবসম্পদ, অভ্যন্তরীণ বাজার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ও সামাজিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিচারে বাংলাদেশ বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।’

২২ এপ্রিল (সোমবার) ব্রুনেই সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের যৌথ সভায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে দুই দেশের অভিন্ন অগ্রযাত্রায় ব্রুনেইয়ের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম বেশি উদার বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র।’

বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগ বিদেশি মালিকানা সুবিধা, পুরো পুঁজি ফেরত নেওয়ার সুবিধা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ বিশ্বের বড় বড় মার্কেটগুলোতে প্রবেশাধিকার, বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা আইন, উদার ট্যাক্স নীতিমালা, মেশিনারিজ আমদানিতে কর রেয়াতসহ বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্বিতীয় বৃহত্তম ও জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪১তম অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ, এখানকার শক্তিশালী বেসরকারি সেক্টর, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিযোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রগতিশীল ম্যাক্রো-ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে টেকসই নীতিমালা, অবকাঠামো ও মানব উন্নয়নে জোরালো বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অসাধারণ সাফল্য এনে দেয়।’

গত বছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর এবছর জিডিপি ৮.১৩ শতাংশে উন্নীত হওয়ার রেকর্ড করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

এবছর মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী, যা মধ্যম আয়সীমার খুবই কাছাকাছি।

শিল্পখাতের দ্রুত বর্ধিতকরণের মাধ্যমে পাঁচ বছরে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয় দ্বিগুণ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি ও সেবা খাত দেশের অর্থনীতিকে আরো বেশি স্থিতিশীল করেছে।’

বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বেসরকারি খাতের উন্নয়নের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাশিপ ও বেসরকারি বিনিয়োগে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। সারা দেশে বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, আইটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সুনাম বিশ্বব্যাপী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পে চায়নার পরে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক।’

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ১০০টি দেশের ওষুধ রপ্তানির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোয়ালিটি মেডিসিন তৈরিতে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম বড় কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।’

প্যাসেঞ্জার ও কার্গো জাহাজ ইউরোপসহ ১৪ দেশ রপ্তানির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব মানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের নজর কেড়েছে।’

সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৮শর মতো আইটি কোম্পানি রয়েছে বাংলাদেশে এবং এর ১৫০টি বেশি কোম্পানি বিদেশি ক্লায়েন্টদের আইটি সেক্টরে সেবা দিচ্ছে। মাক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল ও সিসকোসহ বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই হাজারের বেশি আইটি প্রফেশনাল কাজ করছে।’

পাট ও পাটজাত পণ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে পরিবেশ বিপর্যয় এবং এ নিয়ে সচেতনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বিশ্ব বাজারে। অপেক্ষাকৃত সুলভমূল্যে পাটের বিভিন্ন পণ্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার ব্রুনাই সফর করেছি, সে জন্য আমি জানি ব্রুনেই খুব সুন্দর, খুবই শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানকার মানুষগুলো খুব চমৎকার। এজন্য আমি আমার ব্যবসায়ীদের এই দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এখানে এসে ব্রুনেই সম্পর্ক জানুন। একই সঙ্গে ব্রুনেই দারুসসালামের ব্যবসায়ী কমিউনিটিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাই আসুন বাংলাদেশকে জানুন।’

দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এসময় চারটি চুক্তি সই হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ব্রুনেই সফরের দ্বিতীয় দিনে সুলতানের সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমান ভবনে সুলতান হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। যেখানে সুলতান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ব্রুনেইয়ের মধ্যে ৬টি সমঝোতা স্মারক সই এবং কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়।