‘৯৯৯’ একটি ফোন কলে রক্ষা পাবে মূল্যবান জীবন

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৪৯

বাসার দরজায় ডাকাত। বাড়িওয়ালা কোনোরকম ৯৯৯ চাপার সময় পেয়েছেন। মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে চলে এলো পুলিশ। গ্রেপ্তার হলো ডাকাতরা। রক্ষা পেলো জীবন ও সম্পদ।

মানুষের জীবনে যেকোনো সময় ঠিক এভাবেই বিপদ আসতে পারে। বিপদে সামান্য সাহায্য আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় একটি সরকারি সেবা হলো ৯৯৯ হেল্প লাইন যা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ বা জরুরি সেবা (emergency helpline) নামেও পরিচিত।

‘৯৯৯’ বা জরুরি সেবা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি উদ্যোগ। এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সাহায্য ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে কাজ করছে। যেকোনো মোবাইল ফোন নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে বাংলাদেশের নাগরিকরা এই সেবা পাবেন। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত প্রতিনিধিরা জরুরি মুহূর্তে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সাহায্য বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।

৯৯৯ সেবার কার্যক্রম

২০১৫ সালে অক্টোবরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে প্রথম ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ এর কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে, ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত পুলিশের কন্ট্রোল সেন্টার ভবনে এই সার্ভিসটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে। এরপর ২০১৮ সালে ৯৯৯ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস চালু করা হয়। ৯৯৯ সার্ভিসে ফোন এলে প্রথমে কল গ্রহণ করে অভিযোগ শোনা হয়। যদি প্রাথমিক তথ্য দিয়ে এর সমাধান হয়, তাহলে সেখানেই তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হয়। তবে সমস্যাটি গুরুতর হলে সেটি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

কখন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবেন

কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে, কোনো হতাহতের ঘটনা দেখলে, কারো প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকলে, কোথাও অগ্নিকাণ্ড হলে অথবা জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রয়োজন হলে আপনি ‘৯৯৯’ নম্বরে কর করতে পারবেন। মোবাইল বা টেলিফোন উভয় থেকেই কল করা যাবে।

৯৯৯ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সকল ফিচার

- সম্পূর্ণ টোল ফ্রি নম্বার
- দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি সার্ভিস
- সারা বাংলাদেশ জুড়ে এই সার্ভিস পাওয়া যাবে
- ফায়ার সার্ভিস সাপোর্ট
- পুলিশ সাহায্য সাপোর্ট
- দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স সেবা সাপোর্ট সহ আরো অনেক সার্ভিস

৯৯৯ জরুরি সেবা ব্যবহারবিধি

জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয় হলো সাহায্য প্রার্থীর লোকেশন বা ঠিকানা জানা। অপারেটরকে আপনার সঠিক অবস্থান বলুন, জেলা বা উপজেলার নামও বলতে হবে। সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববতী বড় রাস্তা, বাজার বা হাইওয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেন।

সাহায্যের জন্য আবেদনকারীকে একই প্রশ্নের উত্তর বারবার দিতে হতে পারে। যদি ৯৯৯ থেকে কল ট্রান্সফার করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হয়, তাহলে এমনটা হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে ধৈর্য্যের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে অপারেটরকে সহায়তা করুন।

অপারেটর না বলা পর্যন্ত কলটি না কেটে লাইনে থাকুন। আপনার ফোন নম্বরটি অবশ্যই খোলা রাখবেন, যেন প্রয়োজনে পরবর্তীতে অপারেটর আপনার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিস থেকেও আপনার ফোনে কল আসতে পারে।

সতর্ক ভাবে জরুরি পরিস্থিতিতে তথ্য প্রদান :

১/ আপনি নিজে নাকি অন্য কেউ সমস্যায় পড়েছেন।

২/ কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন।

৩/ আপনার কোন ধরনের জরুরি সেবা প্রয়োজন – অ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা?

৪/ আহত ব্যক্তির অবস্থা কতটুক খারাপ, তার চেতনা আছে কি না, তিনি শ্বাস নিতে পারছে কি না, তার আম্বুলান্সের দরকার আছে কি না, সেই বিষয়গুলো জানাতে হবে।

৫/ কল না কেটে লাইনে থাকুন।

অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য :

‘৯৯৯’ সার্ভিসের মাধ্যমে যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়। আপনাকে এর জন্য টাকা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের কোনো হাসপাতাল বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করে না। ৯৯৯ এর কাজ হল বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া। অ্যাম্বুলেন্সের ধরণ, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে অপারেটরকে সঠিক তথ্য প্রদান করুন। ৯৯৯ সার্ভিস থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয় না।

পুলিশ সেবার জন্য :

জরুরি পুলিশ সেবার জন্য ৯৯৯ নম্বরে কর করলে অপারেটর আপনাকে নিকটস্থ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। আপনি সেখানে আপনার অভিযোগটি জানাতে পারবেন। লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকে ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না। তাই ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনার করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন। আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যেকোন মুহূর্তে আপনার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস সেবার জন্য :

ফায়ার সার্ভিস শুধুমাত্র অগ্নিনকাণ্ড হলে সেবা প্রদান করে তা কিন্তু নয়। সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা অথবা আটকে পড়া মানুষ উদ্ধারের কাজেও ফায়ার সার্ভিসের সেবা নিতে পারেন ৯৯৯ নম্বরে কল করে।

হয়রানিমূলক কল হলে আইনি ব্যবস্থা :

রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯-এ সকল কল রেকর্ড করা হবে। কেউ মজা করতে বা হয়রানি করতে বা কাউকে ফাঁসাতে ফোন করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৯৯৯ ইমার্জেন্সি সার্ভিস অ্যাপ

মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ৯৯৯ জরুরি সেবার কল সেন্টারে সরাসরি ফোন, লাইভ চ্যাট, বিভিন্ন তথ্য খোঁজার জন্য সার্চ অপশন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া এই অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে জরুরি সেবার বিভিন্ন তথ্য লোকেশনসহ জানা যাবে। কল সেন্টারের মাধ্যমে শুধু জরুরি সেবা পাওয়া গেলেও ৯৯৯ হেল্প ডেস্কের ডিজিটাল মাধ্যম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইটে জরুরি (http://nhd.gov.bd/) সেবা ছাড়াও সাধারণ সরকারি সেবা, জীবন ও জীবিকাবিষয়ক নানাবিধ তথ্য ও সেবা পাওয়া যাবে।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

১/ মনে রাখবেন, অযথা কোন কারণে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না।
২/ আপনার বিরুদ্ধে নেয়া হতে পারে আইনি ব্যবস্থা।
৩/ সবসময় প্রয়োজনে ফোন করুন।
৪/ অযথা কোন তথ্য প্রদান থেকেও বিরত থাকুন।
৫/ কল করার পর সঠিক তথ্য দিন।
৬/ এখন থেকে যেকোন ইমারজেন্সি সাপোর্ট এর জন্য ৯৯৯ এ কল করুন।

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জরুরি এই সার্ভিস উদ্বোধনের পর থেকে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার সাধারণ মানুষ এই সেবা নিচ্ছেন। বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, অপহরণ, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনায় কল করে এই সেবা নিতে পাবেন।

যুক্তরাজ্য, মালেয়েশিয়া, হংকং, পোলান্ড, বাহরাইন, কেনিয়া, কাতার, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েসহ অনেক দেশেই ৯৯৯ শটকোর্ডে জরুরি সেবা সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াতে ‘০০০’, নিউজিল্যান্ডে ‘১১১’, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘১১২’, কানাডা ও আমেরিকায় ‘৯১১’ শটকোর্ড দিয়ে জরুরি সেবা সার্ভিস চালু রয়েছে।

সাহস২৪.কম/ইতু/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত