আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত হইনি: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০১৯, ১৬:৩০

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরে সবাইকে হারানোর পর সমৃদ্ধ-উন্নত দেশ গড়তে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে ফিরে এসেছি। সব সময় একটা কথা চিন্তা করেছি, আমাকে কাজ করতে হবে। আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই আমি আজো পথ চলছি।

রবিবার (১৭ মার্চ) গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০১৯ উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি, আমি জানতাম যেকোনো সময় হয়তো আমার বাবার মতো ভাগ্য আমাকে বরণ করতে হবে। কিন্তু কখনও আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত হইনি। আমারও প্রতিজ্ঞা ছিল বাবার স্বপ্ন পূরণ করে এই বাংলাদেশকে উন্নত করে গড়ে তুলবো।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আজকে আমাদের লক্ষ্য তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) যেভাবে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
 
১৫ আগস্টে হারানো স্বজন ও সেই দিনকার হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যখন বিদেশে গিয়েছিলাম তখন বিমানবন্দরে সকলে বিদায় দিয়েছিল। কিন্তু ফিরে এসে কাউকে পাইনি। পেয়েছিলাম বনানীতে এক সারি কবর, আর পেয়েছিলাম এখানে টুঙ্গীপাড়ায় আমার দাদা-দাদির কবরের পাশে শুয়ে আছে আমার বাবা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তিন ভাই হারিয়েছি, পেয়েছি লাখো ভাই। কাজেই আমার জীবনটাও আমি উৎসর্গ করেছি। আমরা দুটি বোন আমরা সব কিছু উৎসর্গ করে দিয়েছি জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণে। দেশের মানুষ যদি ভালো থাকে উন্নত জীবন পায় সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর সে কারণেই আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে, যেন আজকের শিশু আগামী দিনে সুন্দর একটা ভবিষ্যত পায়, সুন্দর একটা জীবন পায়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।’
 
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পরিবার হারিয়েছি, আপনজন হারিয়েছি। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেচেঁ যাই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছিল তাদের বেঁচে থাকার সব সম্ভবনা, উন্নত জীবনের সব সম্ভবনা, স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- সেটাই হারিয়ে যেতে বসেছিল।
 
’৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতির কথা কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের! ’৭৫ এর পর আমাদের শিশু-কিশোর যুবকরা আমাদের বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারেনি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারেনি, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। তবে সত্যকে কখনও কেউ মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখতে পারে না। সত্যের জয় একদিন হয়। সেটাই প্রমাণ হয়েছে আজকে, সত্য আজ উদ্ভাসিত হয়েছে।’
 
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ ৭৫ এরপর নিষিদ্ধ ছিল, ২১ বছর বাজানো যেত না। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের ত্যাগে আজ সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। আজকে সারা বিশ্ব মর্যাদা পেয়েছে, জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত আন্তর্জাতিক প্রামান্য দলিলে স্থান করে নিতে পেরেছে।’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ছিল শোষিত বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, দারিদ্র্যে কষাঘাতে জর্জরিত। ছোট বেলা থেকেই এই দারিদ্র্যপীড়িত মানুষগুলোকে দেখে তার হৃদয় কাঁদতো। তাই তিনি নিজের জীবনের সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন এদেশের মানুষের জন্য। এদেশের মানুষের কথা বলতে গিয়েই তিনি বছরের পর বছর কারাজীবন ভোগ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই কারাগারে যান। বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়েই তার জীবনে নেমে আসে নির্যাতন। কোনো অত্যাচার নির্যাতন, এমনকি ফাঁসির দড়িও তাকে বাধা দিতে পারেনি। তিনি সংগ্রাম অব্যহত রেখে আমাদের স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন।’
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) চেয়েছিলেন এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তুলতে, একটি সুন্দর দেশ গড়তে, যেখানে প্রতিটি শিশু তার জীবন মান উন্নত করতে পারবে। শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা সব দিক থেকে এদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে-এটাই ছিল তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু সে কাজটা তিনি করে যেতে পারলেন না। কারণ ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জাতির পিতাকে হত্যা করা হল।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের মালেকা একাডেমির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া শিকদার। প্রধান বক্তা হিসেব বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

অনুষ্ঠান মঞ্চে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার। 

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোপালগঞ্জ জেলা ব্র্যাডিংয়ের লোগের রেপ্লিকা প্রদান করেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধুকে লেখা শ্রেষ্ঠ চিঠি পাঠ করে শোনান যশোরের কেশবপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ‘আমার কথা শোন’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন ও জাতীয় কাব্যনৃত্যগীতি আলেখ্যানুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গল্প বলা প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রযোগিতা ও ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।  

এরপর শিশুদের ফটোসেশনে অংশগ্রহণ, বইমেলার উদ্বোধন ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আঁকা ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।

এর আগে সকালে টুঙ্গীপাড়ায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত