জাহালমের ২৬ মামলার নথি তলব করেছে হাইকোর্ট

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০১৯, ১৬:৪২

অনলাইন ডেস্ক

বিনা অপরাধে তিন বছর ধরে জেল খাটা টাঙ্গাইলের জাহালমের বিষয়ে দাখিল করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, নিরপরাধ জেনেও জাহালমের জামিনের ব্যবস্থা না করার দায় দুদককেই নিতে হবে।

হাইকোর্ট বলেন, ‘দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এর ভাবমূর্তি মানুষের কাছে খারাপ হোক, তা কাম্য নয়।’

আজ বুধবার (৬ মার্চ) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ  মন্তব্য করেন।

এসময় ‘ভুল’ আসামি জাহালমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ২৬ মামলার যাবতীয় নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ এপ্রিল দুদককে এসব নথি আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর ভুক্তভোগী জাহালমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত।

গত ৩০ জানুয়ারি জাহালমকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেদিনই বিষয়টি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।

জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে ‘ভুল আসামির’ কারাগারে থাকার ব্যাখ্যা জানতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে তলব করেন হাইকোর্ট।

শুনানি শেষে ৩ ফেব্রুয়ারি তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, এই ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে।

না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। আদালত দুদকের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে মন্তব্য করেন, এ রকম ভুলের দায় দুদক কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতেই জাহালম কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।

জাহালমের ঘটনায় দুদক চেয়ারম্যান নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেন। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর দুদকের একজন পরিচালককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় জাহালমকে ভুলভাবে আসামি করার ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাসহ কার কার দায় আছে সেটি খুঁজে বের করতে।

ওই কমিটি এখনও তাদের রিপোর্ট কমিশনে দাখিল করেনি। তবে কমিটি এ ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে পৃথকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩ মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্তকালে ঠাকুরগাঁওয়ের সালেকের বদলে টাঙ্গাইলের জাহালম আসামি হয়ে যান।

আসামি হিসেবে নামটিকে আবু সালেক ওরফে জাহালম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে সালেকের স্থলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে।