স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ১১ খাতে দুর্নীতি: দুদক কমিশনার

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৫

সাহস ডেস্ক

‘দুর্নীতি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। কারণ প্রতিকার সময় এবং অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’- বলেছেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করে, তা প্রতিহতের জন্য মন্ত্রণালয়ে ২৫ দফা সুপারিশ করে তিনি একথা বলেন।

৩১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে এ সুপারিশ তুলে দেন।

কমিশনার মোজাম্মেল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকেই মূলত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমনের কাজ স্বল্প পরিসরে শুরু হয়। আইনি অনুশাসনে কমিশন ২০১৭ সালে ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরও রয়েছে। ইতোমধ্যেই ভূমি, শিক্ষা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সড়ক বিভাগসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সাদরে গ্রহণ করেছে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনে দুর্নীতির ১১টি ক্ষেত্র শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে কমিশনার বলেন, ‘এসব দুর্নীতির উৎস বন্ধে ২৫টি সুপারিশও রয়েছে এ প্রতিবেদনে। এর আলোকে মন্ত্রণালয় যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

সরকারের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর কথা উল্লেখ করে দুদক কমিশনার বলেন, ‘এবারের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করবে এবং করছে। দুর্নীতির ঘটনা ঘটলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

প্রতিবেদন সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, ‘প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসা দেওয়া, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইকুপমেন্ট ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে।’

এসব উৎস বন্ধে যেসব সুপারিশ রয়েছে, সেগুলো হলো- তথ্য বহুল সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন, মালামাল রিসিভ কমিটিতে বিশেষজ্ঞ সংস্থার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে ইজিপি টেন্ডার  প্রক্রিয়া অনুসরণ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপন ও অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব স্থায়ী চিকিৎসক বা কর্মচারী ও কার্যনির্বাহী কমিটি ইত্যাদি রয়েছে কি-না এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলির নীতিমালা প্রণয়ন, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের নাম না লিখে জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা; ইন্টার্নশিপ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা এবং বর্ধিত এক বছর উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে থাকা বাধ্যতামূলক করা, চিকিৎসকদের (সরকারি/বেসরকারি) পদোন্নতির জন্য সরকারিদের ক্ষেত্রে পিএসসি এবং বেসরকারিদের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং পিএসসির প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ দেওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘এ বিষয়ে দুদক কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। এগুলো কোনো অভিযান নয়, এটি কমিশনের আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম মাত্র।’

এ জাতীয় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জনগণের কোনো ক্ষতি কিংবা এর চেষ্টা করেন, তাহলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দুদকের রয়েছে। যদিও কমিশন এই আইন প্রয়োগ করতে চায় না। কমিশন বিশ্বাস করে সবাই স্ব-স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।’

এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হবে। এ প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি উল্লেখ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দুর্নীতি থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওযা হবে না। ভালো লোক থাকলে, ভালো যন্ত্রপাতি কেনা যায়।’

কিছু লোককে ইতোমধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে না। সকল ক্রয় হবে নিড বেইজড। চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি মনিটিরিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে সেল গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।’

প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়য় উভয় বিভাগের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত