'হলি আর্টিজান মামলার আসামিদের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল রিপনের'

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৬

সাহস ডেস্ক

হলি আর্টিজান মামলার পলাতক আসামি মামুনুর রশিদ রিপন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে ত্রিশালের মতো হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের কারাগার থেকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের।

রবিবার (২০ জানুয়ারি) কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এ কথা জানান।

র‍্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা রিপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে জানিয়েছে, ২০১৪ সালে ত্রিশালের মতো জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনা করেছিল তারা। ত্রিশালের মতো আরকেটি ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গিদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল তারা। মূলত হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের। জেএমবির আমির আব্দুর রহমানের মেয়ের জামাই আওয়ালের ভাগ্নে হওয়ায় রিপনে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সংগঠনে।’

রিপনের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। সে ঢাকার মিরপুর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নওগাঁর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। ২০০৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিস থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে সে। এরপর বগুড়ার একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চাকরি নেয়। ২০১৩ সালে ডা. নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে জেএমবির শীর্ষ ও নেতৃত্ব প্রদানকারীদের অন্যতম এবং একাংশের আমির। জেএমবির এই অংশের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে রিপন।

তিনি আরও জানান, বিকাশের দোকান লুট করে ৬ লাখ টাকা, সিগারেটের দোকানে লুট করে ১ লাখ এবং গাইবান্ধা থেকে এক লাখ টাকাসহ মোট আট লাখ টাকা জেএমবির আমির সারোয়ার জাহানের কাছে পৌঁছে দেয় সে। সারোয়ার জাহানের মাধ্যমে জঙ্গি আব্দুল্লাহর সঙ্গেও পরিচয় হয় তার।

রিপনের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি নেতা তামীম চৌধুরীর সঙ্গে সারোয়ার জাহানের একটি বৈঠকের সমঝোতা স্মারক প্রস্তুত করা হয় ২০১৫ সালে। ওই সমঝোতার ভিত্তিতে সারোয়ার জাহানকে আমির নির্বাচিত করা হয়। তার সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয় শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। ওই বৈঠকে জেএমবি সদস্য সাদ্দাম ওরফে কামাল, শরিফুল ওরফে রাহাত ও রিপনসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিল। তার মধ্যে মামুনুর রশীদ রিপন শুরা সদস্য নির্বাচিত হয়।’

জেএমবিতে রিপনের দায়িত্ব ছিল অর্থ সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও অস্ত্র সরবরাহ করা এবং জঙ্গিদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ ছিল।

র‍্যাব জানিয়েছে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে রিপনের নেতৃত্বে একটি জঙ্গি দল ভারত যায়।  তাদের উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার। হলি আর্টিজান হামলার আগে আনুমানিক ৩৯ লাখ টাকা সারোয়ার জাহানকে পাঠায় রিপন। সে হলি আর্টিজান হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের সঙ্গেও জড়িত ছিল। এছাড়ারও উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল রিপন।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ হামলা রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে হয়েছে। হামলা চালানোর আগে তারা মহড়া দিত।  ২০১৬ সালের এপ্রিলে এমন একটি মহড়ায় র‍্যাবের অভিযানে জেএমবির শুরা সদস্য ফারদিন ও তারিকুল ইসলাম জুয়েল নিহত হয়। তবে ওই মহড়ায় ছিল না রিপন। হলি আর্টিজান হামলার পর আইনশৃঙ্খল বাহিনীর অভিযানের জন্য রিপন ভারতে আত্মগোপনে চলে যায়। সে জেএমবিকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ফের বাংলাদেশে আসে। সম্প্রতি তারা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল।’

হলি আর্টিজান হামলার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি জানান, তারা ২০১৫ সালে গাইবান্ধায় মিটিং করে। ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা করে। রিপন হামলার জন্য  তিনটি একে টু, একটি পিস্তল সরবরাহ করেছিল। জঙ্গি মারজানের মাধ্যমে সরোয়ার জাহানকে এসব পাঠায় রিপন। হলি আর্টিজান হামলার আগেরদিন বারিধারায় মিটিং করেছিল জঙ্গিরা। এছাড়া নির্বাচনের আগেও নাশকতার চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত