মাকে অমানুষিক নির্যাতন করায় বাবাকে হত্যা

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫৭

সাহস ডেস্ক

‘কারণ ছাড়াই চোখের সামনে মাকে রোজ মারে ও অমানুষিক নির্যাতন করেন বাবা। এটা দেখে বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আবুল হাসান। ভয়ভীতি দেখিয়েও বাবা আবুল কালামকে ঠিক করা যায়নি। পরে বন্ধুদের নিয়ে বাবাকে হত্যা করে লাশ টয়লেটের ট্যাংকে ফেলে দেন তিনি।’

১১ জানুয়ারি (শুক্রবার) রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় পুলিশের কাছে এভাবেই বাবাকে নৃশংস হত্যা বর্ণনা দিলেন ছেলে আবুল হাসান। এদিন রাত সাড়ে ১০টায় ফেনীর ছাগলনাইয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবুল কালাম হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম।

২০১৮ সালে হাসান মধুগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। সম্প্রতি তার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল।

আবুল কালাম ছাগলনাইয়ার পশ্চিম মধুগ্রামের মিদ্দা বাড়ির মৃত সামছুল হকের ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক বাবুর্চি ছিলেন। অসামরিক কর্মচারি হিসেবে সেনাবাহিনীতে চাকরি করে ক’বছর আগে অবসরে যান তিনি।

৪ জানুয়ারি শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন আবুল কালাম। নিখোঁজের ৬ দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে বাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী রেখা আক্তার ও ছেলে আবুল হাসানকে আটক করা হয়। পরে আবুল হাসানের বন্ধু ইমাম হোসেন রহিমকেও আটক করা হয়।

রহিম কয়ৈরা গ্রামের ওসমান গনির ছেলে। ঘটনার ক্লু উদঘাটন হওয়ার পর শুক্রবার রাতেই রেখা আক্তারকে ছেড়ে দেয়া হয়। হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ছেলে আবুল হাসান ও বন্ধু ইমাম হোসেন রহিমকে।

নিহতের ছেলে আবুল হাসান জানান, ‘তারা ৫ ভাই বোন। তার বাবা কোনো কারণ ছাড়াই প্রায়ই তার ছোট ভাই-বোন এবং মাকে মারধর করতেন। ভাষা ব্যবহার সুন্দর ছিল না।’ নিজ চোখের সামনে এসব দেখে তিনি বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

গত ৪ জানুয়ারি শুক্রবার সকালেও তার বাবা ভাইবোন ও মাকে মারধর করেন। ওইদিন বিকালে হাসান তার ভাইবোনসহ মাকে নিয়ে নানার বাড়ি চলে যায়। সন্ধ্যায় এলাকায় ফিরে তার বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে কীভাবে বাবাকে শায়েস্তা করা যায়।

হাসান বলেন, ‘ওইদিন আমাদের ঘরে বাবা ছাড়া কেউ ছিলেন না। আমরা চার বন্ধু পরামর্শ করে মুখে বেঁধে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে যাই। তখনও আমাদের ঘরের দরজা খোলা ছিল। ভেতরে বাবা দাঁড়িয়ে কি যেন করছিলেন। আমার হাতে লাঠির মত নলকূপের গাজী পাইপ ছিল। আমি বাবার মাথার পেছনে জোরে আঘাত করি। আঘাত পেয়েই বাবা খাটের ওপর পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি বাবার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দেখি কোনো নড়াচড়া নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবাকে জানে মেরে ফেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বাবা মারা গেছে দেখে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। লাশ কোথায় লুকাবো- এনিয়ে বন্ধুরা প্রায় চার ঘণ্টা বুদ্ধি খাটিয়ে রাত আড়াইটার দিকে ঘরের পেছনে পায়খানার ট্যাংকের ঢাকনা খুলে ভেতরে ফেলে দেই।’

হাসান আরও বলেন, ‘লাশ ফেলে দেয়ার পর বাড়ির পাশে বাজারে এসে চার বন্ধু বসে থাকি। ফজরের আযান হলে আমরা যার যার বাড়িতে চলে যাই।’

ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম জানান, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ছেলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার এবং আরও তিন বন্ধু জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নাম পরিচয়ও পুলিশকে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্ধু ইমাম হোসেন রহিম আটক রয়েছেন। বাকি দুজনকে আটক করতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

আবুল হাসান পুলিশকে বলেছে, ‘তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাবাকে ভয়ভীতি দেখানো এবং হাত পা ভেঙে দেয়ার। হত্যার পর তারা কোনো প্রমান না রাখতে আবুল কালামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও টয়লেটের ট্যাংকে ফেলে দেয়। ছেলের ফোন কললিস্ট ধরে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন করি।’

এর আগে আবুল কালামে বোন জরিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।

নিহতের বোন মামলার বাদী জরিনা বেগম জানান, ‘তারা ৫ ভাই ৭ বোন। ৪ ভাই প্রবাসে থাকেন। বোনরা সবাই বিবাহিত। বাড়িতে শুধু আবুল কালাম থাকতেন। ভাইরা সবাই ভিন্ন। তারা ধারণা করেছিলেন, আবুল কালাম ঢাকায় গেছেন।’

বৃহস্পতিবার রাতে তার ছোট ভাইয়ের বউ তাকে ফোন করে বলেন, ‘তাদের টয়লেটের ঢাকনা ফাঁক হয়ে আছে। উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি এ খবর শুনে পরদিন তার পাঠাননগরের স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসেন। বাড়ির আশপাশের লোক ডেকে পুলিশে খবর দেন।’

তিনি তার ভাই হত্যার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

আবুল কালামের বোন রাহেনা আক্তার জানান, ‘তার ভাই দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৫ ছেলে মেয়ে। এ বউকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকতেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ২ ছেলে মেয়ে। তারা ঢাকায় থাকেন।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত